আগামীতে এসব শিশু-কিশোরদের
কর্মমুখী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
মরিয়ম জাহান মুন্নী
দীর্ঘ এক যুগ ধরে জায়গার সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পরিচালিত শিশু বিকাশ কেন্দ্র চট্টগ্রাম। শুধু জায়গার সংকটই নয়, জরাজীর্ণ আবাসস্থলে বসবাস করছেন ছেলে শিশুরা। পাশাপাশি রয়েছে জনবল সংকট। শিশু বিকাশ কেন্দ্র যেন নিজেই ভুগছে বিকাশের অভাবে।
নগরীর নাসিরাবাদ হিলভিউ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ১০০ আসন বিশিষ্ট শিশু বিকাশ কেন্দ্রে বর্তমানে ৯৫টি শিশু কিশোর আছে। এদের ৬০ ভাগই বাবা-মা হারা অনাত শিশু। বাকিরা গরীব-দুস্থ পরিবারের সন্তান। অনাত এ শিশুদের মধ্যে আবার বেশির ভাগই পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি শ্রেণীর শিশু।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা বিশিষ্ট একটি ভাড়া বাসায় ১০০ জনের শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। নিচ তলায় শিশুদের থাকার দু’টি হল রুম, একটি ডাইং রুম, একটি গোসলখানাসহ প্রস্ত্রাব-পায়খানা, রান্না ঘর, অফিস কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় বড় আরেকটি হলরুম ও গোসলে জায়গা রয়েছে। শোয়ার ঘরে ফ্লোরে তোশক পেতে অনেকটা গাদাগাদি করে রাত্রি যাপন করে শিশুরা। নেই কোনো ছৌকি বা খাট। শিশুদের জন্য একজন পুরুষ ও একজন নারী শিক্ষিকা রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আবার রান্নার লোক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার জন্যও নেই পর্যাপ্ত কর্মচারী। তবে এখানে জনবলের চেয়ে বেশি সমস্যা জায়গার।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১০ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশু বিকাশ কেন্দ্র শুরু হয়। সারাদেশে ছয়টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মধ্যে একটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। ২০১০ সালে শিশু বিকাশ কেন্দ্রটি ১০০ জন মেয়ে শিশু এবং ১৫০ জন ছেলে শিশু নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু জায়গাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে মেয়েদেরকে সমাজসেবার শিশু নিকেতনে সরিয়ে নেয়া হয়। বাকি ৫০ জন ছেলে কমিয়ে ১০০ জন ছেলে শিশু-কিশোরদের নিয়ে হিলভিউতে শিশু বিকাশ কেন্দ্রটি ১২ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে এখানে ভাড়া বাসায় চলছে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কার্যক্রম। নতুন করে সরকারিভাবে ১০০ ছেলে শিশু কিশোরের থাকার অনুমোদর দেয়া হয়। কিন্তু সেই তুলনায় জায়গা নেই। বড় কোনো আবাস্থলের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না। কারণ এমন শিশুদের জন্য বাড়িওয়ালারা বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। আবার ছোট পরিসরেও এমন বিকাশ কেন্দ্র করা যায় না। এমনি কিছু কারণে নতুন কোনো জায়গায় স্থানান্তর করা যাচ্ছে না শিশু বিকাশ কেন্দ্রটি।
এবিষয়ে শিশু একাডেমি পরিচালক মো. মোছলেহ উদ্দিন বলেন, এক যুগের বেশি সময় শিশু বিকাশ কেন্দ্র চট্টগ্রাম জায়গার সংকটে ভুগছে। চট্টগ্রামে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছি শিশু একাডেমির শিশু বিকাশ কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করতে। সেবিষটি মন্ত্রণালয় দেখবে বলা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যদি সুযোগ থাকতো শিশু একাডেমির সেখানে এ শিশুদের থাকার ব্যবস্থা করা হত। কিন্তু সেখানেও জায়গার সংকট। এলাকার কোনো বাড়ির মালিক শিশুদের নিয়ে এমন সংগঠন করতে চাইলে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন না। আবার পেলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ছোট হয়ে যায়। তাই এখন সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নিলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। না হয় এমন দূর্ভোগ পোহাতে হবেই।
মোছলেহ উদ্দিন আরো বলেন, এখানে বেশিরভাগ অনাত-এতিম শিশু। আবার কিছু শিশু আছে যাদের বাবা নেই শুধু মা আছে। কিন্তু মা তাকে লালনপালন করতে পারছে না। প্রায় ২০ ভাগ শিশু আছে যারা পাহাড়ী। এরা খুবই গরীব পরিবারের। যারা দুবেলা ভাতও থেকে পায় না। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে ১ম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিশেষ বিবেচনায় কিছু কিছু শিশু-কিশোরকে ১০ শ্রেণী পর্যন্তও রাখা হয়। এবারও এখানে কয়েকজন শিশু এসএসসি দিয়ে বিদায় নিয়েছে। সপ্তাহে একদিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এরবাইরে এখনো পর্যন্ত এ শিশুদের কোনো কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তবে আগামীতে সরকারিভাবে একটি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যেখানে এ শিশুদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে তারা স্বনিভরশীল হতে পারে। আশা করছি সেটি আগামী এক বছরের মধ্যে চালু হবে।
শিশুদের তিনবেলা ভাত ও এক বেলা নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই খাদ্য তালিকায় দেখা যায়, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন সকালে ভাত-সবজি। দুপুরে ভাতের সাথে, তিনদিন মাছ, তিনদিন মুরগি এবং সবজি-ডাল দেয়া হয়। বিকেলের নাস্তায় বনরুটি ও কলা, দুধ ও মুড়ি, সিঙ্গারা বা ডালপুরি, ছোলা-মুড়ি, বাটারবন এক এক দিন এক একটা খাবার দেয়া হয়। আবার রাতের খাবারে ভাতের সাথে কখনো মাছ কখনো ডিম সবজি ডাল দেয়া হয়।