নবযাত্রা প্রতিবেদক
১৯৭১ সালের আজকের দিনে হাজার বছরের পরাধীনতার শেকল ভেঙে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। আর সেই ঘোষণার পথ ধরেই অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।
আজ ২৬ মার্চ দেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীরশহিদদের। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে- যারা অধিকার আদায়ে ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বরং বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন মহামৃত্যুঞ্জয়ী। তাই নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে- আজ তারা যে পথটি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তার দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক, মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, দেশে উন্নয়নের যে গতি সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাণীতে তিনি সব বাংলাদেশিকে ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। দেশে এবং প্রবাসে থাকা সব বাংলাদেশিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে থাকার জন্য সব বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন, সংস্থা ও ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিরা দিবসটি উদ্যাপন করবেন।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি পালনের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আজকের দিনে জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের। স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। জাতি স্মরণ করে দেশের জন্য, বাংলা ভাষার জন্য, স্বাধিকারের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা প্রতিটি মানুষকে।
এই দিনে সারা দেশের মানুষ বারবার স্বাধীনতার মর্মবাণীটি অনুধাবণ করবে। আরও একবার শপথ নেবে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে চলার।