ঈদের মার্কেটে রমরমা দেশীয় পোশাকগুলো

নবযাত্রা প্রতিবেদক


এবার ঈদের মার্কেটে বেশ রমরমা চট্টগ্রামের ডিজাইনারদের তৈরি দেশীয় পোশাকগুলো। উল্লেখ্যযোগ্য দেশীয় ঢাকাই ফ্যাশন হাউস ও পাকিস্তান-ভারতসহ বিভিন্ন বিদেশী পোশাকের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের বুটিক হাউসগুলো।

ঈদ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামের লোকাল হাউসগুলোয় দেখা যায় নিজস্ব ডিজাইনারদের তৈরি নানা রকমের পোশাক। পোশাকগুলো তৈরি হয়েছে মূলত কটন, সফুরা সিল্ক, মসলিন, জামদানি, খাদি, ও তাঁতের কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ দিয়ে। বিশেষ করে পোশাকগুলো হচ্ছে মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিজ, দু-পিজ, কুর্তি, কুটি ও গাউন্ড। আবার একইভারে তৈরি হচ্ছে ছেলেদের ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট। রয়েছে শিশুদের আরামদায়ক পোশাকগুলোও।

মিমি সুপার মার্কেটের ‘সাইমাস ক্রিয়েশন’এর কর্ণধার ও ডিজাইনার সাইমা সুলতানা বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমাদের দেশীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক এখন আন্তর্জাতিক মানের পোশাকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আবার আমরা চট্টগ্রামে যারা আছি তাদের মধ্যে অনেকে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশ ব্যাপী কাজ করছি। প্রতিবছর ঈদসহ বিভিন্ন বাঙালি উৎসবে আমাদের দেশীয় ডিজাইনাররা অসাধারণ কিছু ডিজাইন নিয়ে আসে। এগুলোর ক্রেতা চাহিদাও অনেক বেশি। সামনে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন ডিজাইনাররা আরো এগিয়ে যাবে।

তবে চট্টগ্রামের এ ডিজাইনারদের এগিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা। যা এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এমন কিছু তথ্য জানা যায় চট্টগ্রামের কয়েকজন বুটিক্স হাউসের কর্ণধারের সাথে আলোচনা করে।

খুলশী কনকর্ড টাওয়ারের ‘স্ট্রাইপ ফ্যাশন হাউস’এর কর্ণধার সাদমান সাঈকা সেফা বলেন, দেশীয় বুটিক আরো ভালো করতো, যদি নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান করা যেত। বিশেষ করে বড় সমস্যা হচ্ছে পোশাক তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। তারউপর আমাদের কিছু লিমিডেট উপকরণ নিয়ে কাজ করতে হয়। অথচ ভারত-পাকিস্তানে তারা অনেকগুলো উপকরণের মিশ্রণে কাজ করে। তাদের এ কাপড়গুলো আমাদের দেশে চাহিদাও বেশি। অল্প দামেও পাওয়া যায়। আমরা কাজ করি মূলত সফুরা সিল্ক, মসলিন, জামদানি, খাদি, কটন, তাঁত এমন কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ নিয়ে। কিন্তু এগুলো এখন অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। এত দামের মধ্যেও যখন কোনো প্রোডাক্ট তৈরি করি দেখা যায় বিক্রির সময় ক্রেতার সাথে দামের তারতম্য হয়। পাশাপাশি দক্ষ কারিগরের অভাব রয়েছে। আবার আমরা যারা নারী উদ্যোক্তা আছি ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে তারা ঋণ দিতে চায় না। বাবা বা স্বামীর বিভিন্ন রকম কাগজপত্র খুজে। সমস্যার এমন কথা জানালেন প্রায় সব ডিজাইনাররা।

চট্টগ্রামের ফ্যাশেন ডিজাইনার ‘রওশন বুটিক হাউসের কর্ণধার রওশন আরা চৌধুরী বলেন, ৯০’এর দশকে আমরা যখন দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করছিলাম তখন সারাদেশে হাতেগোনা কয়েকজন দেশীয় বুটিস নিয়ে কাজ করতো। সে সময়ে ভালোই চলছিল দেশীয় কাপড়ের তৈরি পোশাকগুলো। কিন্তু একসময় আমরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের সাথে টেক্কা দিতে পারছিলাম না। এমন কিছু সমস্যার কারণে পুরোনো ডিজাইনাররা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। এভাবে প্রায় এক যুগের বেশি সময় জৌলুস হারায় দেশীয় বুটিক। তবে এখন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রামের দেশীয় বুটিকগুলো।

চট্টগ্রামের পুরোনো বুটিক হাউস ‘অনিন্দ্র’এর কর্ণধার লুৎফা সানজিদা বলেন, ১৯৮৯ সালের দিকে যখন আমরা কাজ করতাম তখন দেশীয় পোশাকের ভালো মার্কেট ছিল। পরে ভারত-পাকিস্তানের কাপড়গুলো চল আসে। তখন আমরা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ি। কারণ তখন বিভিন্ন কাপড়ের গজ প্রতি ১০০-১৫০ টাকা দাম বেড়ে যায়। এ দামে পোশাক তৈরি করে বিক্রি করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। তাই একটু মার খায়। তবে এখন আশার আলো দেখছি দেশীয় বুটিক হাউসের। এখনের ডিজাইনাররা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে আগে পড়াশোনা করছে, তারপর তারা ব্যবসা শুরু করছে। তাই তারা কিন্তু ভালোও করছে। বিদেশি ডিজাইনারদের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *