এক বছরে ১১ অপরিহার্য প্রসাধনীর দাম বেড়েছে ১১.৪৪ শতাংশ

নবযাত্রা প্রতিবেদক

ঘুম থেকে উঠা আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অপরিহায্য পণ্য। যেগুলো ছাড়া একটা দিনও চলে না কোনো মানুষের। এমন অপরিহার্য ১১টি নিত্যপণ এক বছরে লাগামহীন দাম বেড়েছে। ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত এসব পণ্যের দাম এক বছরে বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত।

নিত্য পরিহায্য এসব প্রসাধনীগুলো হচ্ছে পেরাসুট, হুইল পাউডার, সার্ফ এক্সেল, পেপসোডেন্ট, ক্লোজআপ, হুইল, লাক্স, লাইফবয়, ডেটল, কেয়া ও ৩৭০ বাংলা সাবান। এছাড়া দাম বেড়েছে ইউনিলিভার লিমিটেডের আয়ুর্বেদিক ফেয়ার এন্ড লাভলী, মাল্টিভিটামিন ক্রিম, সানসিল্ক শ্যাম্পু, ডাভ শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশের। ২০২০ সালে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেই অন্যান্য পণ্যের সাথে এসব নিত্য অপরিহার্য প্রসাধনীর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এরপর থেকে দেশের বাজারে প্রতি দিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত এক বছরে এসব পন্যের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এদিকে গত সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে এসব প্রসাধনীসহ আরো ১৩৫ টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের উপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুন্য ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে তা আরো একদিন আগে থেকেই কার্যকর হয়েছে।

১১টি পণ্যের এক বছরের বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডেটল সাবান ও ১৫০ গ্রাম ওজনের একটি লাক্স সাবানে বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, লাইফবয় সাবানে ১০ শতাংশ, হুইল সাবানে ১২ শতাংশ, কেয়া সাবানে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বাংলা সাবারে ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। আবার ১৬০ গ্রামের পেপসোডেন্টে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, একই পরিমাপের ক্লোজাপে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৫শ’ গ্রামের একটি পেরাসুটে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, এক কেজি ওজনের হুইল পাউডারে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সার্ফ এক্সেল ৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এক বছর আগে ১২৫ গ্রামের ডেটল সাবান বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। ১৫০ গ্রাম ওজনের একটি লাক্স সাবান ৬০ টাকা থেকে বেড়েছে ৬৫ টাকায়, ১শ’ গ্রামের লাইফবয় ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। বাংলা সাবানের গোল্লা ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকায়, হুইল সাবান ২২ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকায়, বড় আকারের কেয়া সাবান ৩৮ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের হুইল পাউডার ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ টাকায়, এক কেজি সার্ফ এক্সেল ২৩৫ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকায়, ৫শ’ গ্রাম পেরাসুট ২৬০ থেকে বেড়ে ২৯৫ টাকায়, ১৬০ গ্রামের পেপসোডেন্ট ১১৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকায় ও একই সাইজের ক্লোজাপ ১১০ থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নারীদের ব্যবহৃত প্রসাধরী বাইরের আয়ুর্বেদিক ক্রিম ৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এটি আগে বিক্রি হয়েছিল ২২০ টাকায়। একই পরিমাপের বাংলাদেশী ক্রিমটি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আগে এটির দাম ছিল ১২০ টাকায়। বাইরের মাল্টিভিটামিন ক্রিম ২১০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। ১৬০ মিলি ওজনের সানসিল্ক শ্যাম্পু ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায় এবং বাংলাদেশী শ্যাম্পু বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে বেড়ে ২০০ টাকায়।

ভিআইপি টাওয়ারের প্রসাধনী আমদানীকারক রাশেদ চেীধুরী বলেন, করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানী বন্ধ ছিল। আমদানি আবার যখন শুরু হয় তখন বন্দর দিয়ে পণ্য আসে না। পণ্য আসে আকাশ পথে। আকাশ পথে এসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি হিসেবে। যা সাগর পথের চেয়ে কয়েকগুল বেশি দাম পড়ে যায়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। এসব কারণেই দাম বেড়েছে।

আমদানিকারকরা আরো জানায়, এসব পণ্য খুচরা বাজারে আসতে আসতে আরো দু-তিন ধাপে দাম বাড়ে। এছাড়া এসব পণ্যগুলো বিভিন্ন অভিজাত মলগুলোতে গায়ে রেট যা তাই বিক্রি করে। কিন্তু বাইরের এসব পণ্য রুপি কিংবা বিদেশি দাম লেখা থাকে। বাইরের দাম সম্পর্কে অনেক ক্রেতা না জানায় বাংলাদেশি হিসেবে বেশি টাকা নিয়ে পেলে অসাধু বিক্রেতা। কিন্তু বেশির ভাগ পণ্য গায়ে রেটের চেয়ে কিছু কম রাখার নিয়মও আছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের দাম উপর থেকে বাড়ায় খুচরা বাজারে বেড়েছে। আমরা চাইলেই পণ্যের দাম বাড়াতে পারি না। কারণ এখন প্রতি মুহুর্তের খবরাখবর মানুষ রাখে। মিথ্যা দাম বললে ব্যবসা করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *