নবযাত্রা প্রতিবেদক
‘গোড়া দিন ভালা কামাই হয় না। ইফতারের সময়ড়াই ভালা রোজগার হয়। এহনতো চড়া রোজার বাজার, তারপর আইতাছে ঈদ। তাই রোজা রাইখাই ভাড়া মারি’। মুখের ঘাম মুছতে মুছতে মধ্যম বয়স্ক রিকশাচালক দাউদ মিয়া কথাগুলো বলছিলেন। ভালো আয়ের আশায় ইফতারের আগ মূহুর্তে ভাড়া নিয়ে ঘরমুখী মানুষকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন দাউদ মিয়ার মত হাজারো রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু তারাই ইফতার করেন পরিবার ছাড়া কোনো এক ফুটপাতের পাশের দোকানে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছয়টা বাজার কিছু মূহুর্তে নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে একটি ভাড়া নিয়ে নতুন চান্দগাঁও থানা এলাকার সামনে ছুটে আসেন দাউদ মিয়া। এদিকে, সেই কাস্টমার রিকশা থেকে নেমে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। যেন তাঁর ফিছু ফিরে দেখার ফুরসত নেই। দাউদ মিয়া সেই টাকা গুণে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে পকেটে রাখেন। কোমর থেকে মোবাইলটা বাইর করে সময় দেখেন তিনি। এবার রিকশাটাকে রাস্তার এক পাশে রেখে ইফতারের জন্য পাশেই একটি ফুটপাতের দোকানে ঢুকে পড়েন। তিনি সারাদিন রোজা রেখেছেন। এখন ইফতারের সময় হয়ে গেছে। একই ভাবে ইপিজেড থেকে সিএনজিওয়ালা মনির ভাড়া নিয়ে আসেন এখানে। তাঁর বাসা দূরে। এদিকে ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ জন্য তিনিও গাড়ি সাইড করে ইফতারের জন্য বসে পড়েন পাশের খাজা ঝাল বিতানের ব্যাঞ্জে। রাস্তার ধারে পাতা পাঁচটি ব্যাঞ্জে ছয়জনের জায়গায় অনেকটা চাপাচাপি করে আটজন বসেছেন। তারা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। এরমধ্যে বেশিরভাগই রিকশাচালক ও সিএনজি ড্রাইভার।
দোকানী মো. কাউছার ও তাঁর সহকারী তাড়াহুড়ো করে সবার সামনে ইফতারের প্লেট সাজিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে ড্রাইভাররা পরিবার ছাড়া ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর অপেক্ষা করছেন আজানের জন্য। মাত্র ৫০ টাকা দামের একটি ইফতারের প্লেটে পাওয়া যাচ্ছে কিছু পরিমান ছোলা, দুইটা খেজুর, একটা জিলাপি, দুইটা বেগুনি, দুইটা আলুর চপ, দুইটা পেয়াজু, মুড়ি, এক গ্লাস সরবতসহ পানি। ততক্ষণে মসজিদের মাইকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। যদিও এই টেবিলে নেই কোনো দামি হালিম, ফিরনি, পায়েস, চিকেন কিংবা মাটান। তবুও তারা অনায়েশে খেতে শুরু করেন ইফতার।
দাউদ মিয়া বলেন, আমার বাসা শের শাহ বাংলা বাজারে। ভাড়া নিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছি। এখানেও একটা ভাড়া নিয়ে এসেছি। ইফতারের সময় ভালো আয় হয়। সারাদিন বাইরে থাকলেও কিন্তু সেইভাবে আয় হয় না। এ জন্য পরিবারের সাথে ইফতার করা হয় না।
আরেক রিকশাচালক ইলিয়াস বলেন, কর্মস্থল থেকে মানুষ ঘরে ফিরে। তাদের ঘরে পৌঁছাই দিই। এসময় ভালো ভাড়াও পাওয়া যায়। সারাদিনের আয় এ সময়ই হয়। আমিসহ চার জনের পরিবার। কিন্তু আয় শুধু আমিই করি। ঈদে বাচ্চাদেরকে নতুন কাপড় কিনে দিতে হবে। গ্রামে বাবা-মা একটা বোন আছে। ঈদে তাদের জন্য নতুন কাপড় কিনতে হবে। তাই বাইরে ইফতার করলেও অল্প টাকার মধ্যে ইফতারিটা সারি।
সিএনজি চালক মনির বলেন, সারাদিন যা আয় হয় তা দিয়ে গাড়ির ভাড়া, রাস্তায় পুলিশসহ কত রকমের টাকা দিতে হয়। সব দিয়ে খুব বেশি কিছু থাকে না। মানুষ ভাবে ভাড়া বেশি, আমাদের অনেক লাভ। আসলে তা কিন্তু না। যা আয় তাই ব্যয়। কারণ এখন বাজারে সব কিছুর দামই বেশি। জমা কিছু থাকে না। ইফতারের আগ মূহুর্তে ভাড়া মারলে ভালো আয় হয়। ঈদে মার্কেট করতে হবে সবার জন্য। তাই কষ্ট হলেও এ সময় ভাড়া মারি।