নবযাত্রা প্রতিবেদক
‘ও ভাই আরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান। দইজ্জার কুলত বসদ গড়ি শিনা-দি ঠেহাই ঝড় তোয়ান।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সুরে মুখরিত হয়ে উঠে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরীতে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ‘চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব’। প্রায় হাজার খানেক দর্শকের উপস্থিতিতে নগরীর লালদিঘীর পাড় গোলচত্বরে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত এই উৎসব জমে উঠে। উৎসবে চট্টগ্রামের সাংসদ, মেয়র, রাজনীতিক, সংস্কৃতিজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক গান-নাচের সাথে চট্টগ্রামের নিজস্ব নানা কৃষ্টি কালচার তুলে ধরেন স্থানীয় শিল্পীরা। দর্শকের মন কাড়ে ‘মালকা বানুর দেশেরে, বিয়ার বাইদ্য আল্লা বাজেরে।/ মালকার বিয়া হইবো, মনু মিয়ার সাথেরে’ গানের সুরে নববধু ও বরের সাজে ফ্যাশন শো’তে অংশ নেয়া দুই শিশু। ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি ফানি/ লুসাই পাহাড়ত্তুন লামিয়ারে যার গৈ কর্ণফুলী’ গানের সাথে পাহাড়ি নৃত্য পুরবেশন করে এক ঝাক শিশু শিল্পী। গানের মধ্যে পরিবেশিত হয় চট্টগ্রামের খ্যাতিমান শিল্পী শেফালী ঘোষ ও শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবে বিখ্যাত গান সমূহ।
গতকাল বুধবার বিকেলে চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজিত এক দিনের এ উৎসবে একটি র্যালির অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত ডালা, কুলা, মাছ ধরার জাল, নৌকা ইত্যাদি উপস্থাপন করে শিল্পীরা। এর আগে উৎসবে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, দেবাশীষ পাল দেবু, হেলাল উদ্দিন, আরশাদুল আলম বাচ্চু, নুরুল আজম রনি ও জাকারিয়া দস্তগীর।
এসময় মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বৃটিশ শাসনামল থেকে প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছে চট্টলাবাসী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল না, এ যুদ্ধ ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার যুদ্ধও। আজও এ যুদ্ধ চলমান আর এ যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।
উৎসবে চট্টলাবাসীকে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করতে কাজ করছি তাদের মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ষড়যন্ত্র ঠেকাতে বীর চট্টলাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজনে আমরা জীবন দিব কিন্তু বাংলাদেশকে বেহাত হতে দিবনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য রালিতে অংশ নেন চসিক মেয়রসহ উপস্থিত অতিথিরা।