নিরবে বেড়েছে শুঁটকির দাম

নবযাত্রা প্রতিবেদক

উর্ধ্বগামী দ্রব্যমূল্যের বাজারে এবার বেড়েছে শুঁটকির দাম। এক বছরের ব্যবধানে ছুরি, চিংড়ি, লইট্টা, লাক্ষা, ইলিশ, রূপচাঁদা, হাসু, ফাইস্যা শুঁটকিসহ বিভিন্ন রকম শুঁটকিতে দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

আছদগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানায়, পাঁচ কারণে বেড়েছে শুঁটকির দাম। উল্লেখ্যযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে, সমুদ্রে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। এ বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে মাছের দাম বাড়তি। শুঁটকি তৈরিতে অপরিহার্য লবণের দাম বেড়েছে। শুঁটকি তৈরির শ্রমমূল্য বেড়েছে। করোনার কারণে শুঁটকির আমদানি ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আবার গত কয়েক বছরে সামুদ্রিক মাছ হিমায়িত করে বিদেশে রপ্তানি করায় শুঁটকি তৈরির মাছ আরো কমেছে গেছে। এসব কারণে বেড়েছে শুঁটকির দাম।

আছদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ও শুঁটকি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। বিগত দুই বছর ধরে বাজারে মাছের দামও চড়া। এক কেজি ছুরি মাছ পাইকারিতে ২৫০ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু এক কেজি ছুরি শুঁটকি পেতে প্রায় পাঁচ কেজি ছুরি মাছ শুকাতে হয়। আবার ৭ কেজি লইট্টা মাছ শুকালে এক কেজি শুঁটকি হয়। শুঁটকি তৈরিতে লবণের প্রয়োজন হয়। আগে এক বস্তা লবণ ৬০০ টাকায় বিক্রি হত। এখন সেই লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে এক হাজার টাকায়। আবার হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে লাভ বেশি হওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায় দাদন ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেছে। তাই তাদের আগ্রহ বেশি এখন হিমায়িত মাছ রপ্তানির দিকে। যে কারণে কমেছে শুঁটকির উৎপাদন।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মোতালেবের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দেশে ৬০ শতাংশ শুঁটকি মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। আমদানি করা শুঁটকির মূল্য বেড়ে গেছে। শুঁটকি ব্যবসার মৌসুম অক্টোবর থেকে জানুয়ারি উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানান, এখন শুঁটকির মৌসুম না। এ কারণেও এখন শুঁটকির দাম বেশি।

গতকাল নগরীর আছদগঞ্জ শুঁটকির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে প্রতি কেজি চিংড়ি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। রূপচাঁদা শুঁটকির কেজি দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকায়। লইট্টা শুঁটকি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। লাক্ষা ৪ হাজার ও ইলিশ শুঁটকি পিস ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ শুঁটকিগুলো খুচরা বাজারে এসে কেজিতে বাড়ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।

মো. শফিউল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, এক মাস আগে ২০০ গ্রাম চিংড়ি শুঁটকি কিনেছিলাম ২৪০ টাকায়। এখন সেই শুঁটকিটাই বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। হাসু শুঁটকি আগে ১০০ গ্রাম ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এখন ১০০ গ্রাম হাসু শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। সামান্য এ শুঁটকির দামও এতো বেশি হয়ে গেছে। খুচরায় চিংড়ি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায়। রূপচাঁদা শুঁটকি কেজিতে বেড়েছে ৩৫শ’ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৫শ টাকায়। লইট্টা শুঁটকি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। আবার খুচরা বিক্রিতে কেজি হিসেবে আরো বেশি দাম পড়ে।
চকবাজার আবদুল ছবুর শুঁটকি দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল ছবুর সওদাগর বলেন, করোনার পর থেকেই বেড়েছে শুঁটকির দাম। আগে যেভাবে দেশে শুঁটকি উৎপাদন হত এখন সেইভাবে শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে না। আবার আগে আমদানি করা শুঁটকির দাম কম ছিল। কিন্তু এখন সেই আমদানি করা শুঁটকির দামও বেশি তাই বাজারে শুঁটকির দাম বেশি। বাজারে চিংড়ি, ছুরি ও লইট্টা শুঁটকির চাহিদা বেশি। তাই এ কয়েকটি শুঁটকির দামও বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *