ভিক্ষুকের খাবার হাওয়া করে খাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
কালো রংঙ্গের প্রাইভেটকার আসতেই ছুটে গিয়ে ঘিরে ধনের ৩০-৩৫ জন ভিক্ষুক। খাবার নিয়ে নামতেই এক রকম কাড়াকাড়ি করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় খাবার। তবে সবার ভাগ্যে মিলেনি বিরিয়ানির প্যাকেট। মাত্র ১৪ জনে খাবার পেলেও বাকিরা খালি হাতে ফিরেন। কিন্তু তারাও কম যায় না। খাবার না পেয়ে কয়েক জনে মারামারি হাতাহাতি শুরু করে দেয়। এমন দৃশ্য এক দিনের নয়, প্রতিদিনই নগরীর প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত হযরত শাহ ছুফি সৈয়দ বদনা শাহ্ মিঞা (রহঃ) মাজের দৃশ্য।
মাজারের সামনে রাস্তার পাশে ২০ জনের বেশি বাস্তুহারা মানুষ থাকেন। যারা মানুষের দান করা খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করেন। এদের মধ্যে কেউ পঙ্গু, কেউ অন্ধ, কেউ পাগল আবার কেউ কেউ আছেন স্বামী- সন্তান হারা অসহায় নারী কিংবা নানা শারীরিক জটিলতায় অসুস্থ ব্যক্তি। যারা কাজ করে খাবার সামর্থ নেই। এ অসহায় মানুষদের একমাত্র ভরসা বদনা শাহ মাজারের ভক্তজন। যারা বিভিন্ন নিয়তে গরীব দুঃখী মানুষদের জন্য মাজারে খাবার দাম করে থাকের। তাঁরাও খাবারের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিদিন খাবার আসলেও কিন্তু বাস্তুহারা দরিদ্র এ মানুষগুলো পাচ্ছে না খাবার। কারণ খাবার নিয়ে হাওয়া হয় যাচ্ছে মাজার পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা। এমন অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এখানের বাস্তুহারা মানুষরা।
অপেক্ষমান কয়েকজন ভিক্ষুকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই বেশ কিছু ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে এবং কিছু ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খাবার নিয়ে আসে তাদের জন্য। তারা খাবার এনে মাজারের খতিবদেরকে দেয়। কিন্তু খতিবরা সেই খাবার গরীবদের না দিয়ে খাবার নিয়ে চলে যায় নিজেদের ঘরে। এদিকে ভিক্ষুকরা অনাহারে। যে দিন ভাগ্য ভালো থাকে, সেদিন কিছু মানুষ খাবার এনে সোজা ভিক্ষুকদের হাতে দেয়। তবে এক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। খাবারের প্যাকেট হয়তো বেশি এনেছেন আর না হয় কম। বেশি হলে সমস্যা হয় না। তবে কম হলে কাড়াকাড়ি করে অনেকে নিতে পারে। আর যারা পারে না, তাদের মধ্যে অনেকে মারামারি শুরু করে। এতে অনেকে আহত হয়।
এখানের পঙ্গু এক ভিক্ষুক নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি নেই। এখানে থাকি, কেউ খাবার দিলে খাই। আগে মোটামুটি দুই বেলা খেয়ে পারতাম। কিন্তু এখন এমনও দিন যায় কোনো কোনো দিন এক বেলা খাবারও ঝুটে না। কিছু করার সামর্থ নেই দেখেই এখানে পেট চালাতে পড়ে থাকি। কিন্তু এখন মাজারে দায়িত্বরত খতিব মনির আহমেদ এবং তাদের কারো হাতে দিলেই খাবার তারা খাবার হাওয়া করে দেয়। রাস্তার ধারে বসে দু’চার টাকা মানুষ থেকে খুঁজে পেলে তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থা আমার একার নয়, এখানে যারা রয়েছে তাদের সবারই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *