মাহফুজের দুই স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা

নবযাত্রা ডেস্ক

আবারো আলোচনায় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাওয়া’ সংক্রান্ত তার এক স্ট্যাটাস নিয়ে যখন পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে, ঠিক তখনই তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে শিবিরের ওপর নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, পাকিস্তানপন্থিরা যেখানেই থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে। এ ছাড়াও কয়েকটি আপত্তিকর শব্দও ব্যবহার করেন স্ট্যাটাসে। যদিও সমালোচনার মুখে তাৎক্ষণিক স্ট্যাটাসটি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেন তিনি। শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর সব আন্দোলনকারী যখন ঘরে ফিরে যায় তখন মাহফুজ আলম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একাত্তর ও মুজিববাদী বাম ইস্যুতে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একাত্তরের প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায় মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টি সিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা কালচারালি ও ইন্টেলেকচুয়ালি জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এরা চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারও কাঁধে ভর করে লাভ নেই।’ এ স্ট্যাটাসে একাত্তর ইস্যু টানায় অনেকে তার পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা করেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মাদ্রাসা জীবনের বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়। পাঞ্জাবি পরিহিত ওসব ছবি মূলত শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বলেও প্রচার করে কেউ কেউ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন উপদেষ্টা মাহফুজ।

গতকাল সন্ধ্যায় পাল্টা স্ট্যাটাস দেন তিনি। মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নেন তিনি। ততক্ষণে স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে যায়। সে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমাকে নিয়ে নোংরামি করতেসো, ঝামেলা নাই। ফ্যামিলি টাইনো না, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং। আর, যে চুপা শিবিররা এ সরকারে পদ বাগাইসো আর বিভিন্ন সুশীল ব্যানার খুলে পাকিস্তানপন্থা জারি রাখসো, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ রাজাকার আর দালালদের তুলনায় আরও অধিক ভুগবা। যারা বিতর্কের এবং গালাগালির লিমিট জানে না, তাদের আমি সহ-নাগরিক মনে করি না। পাকিস্তানপন্থিরা যেখানেই থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে। আমৃত্যু! ঢাবিতে এ রাজাকারদের আগে ঠেকানো হবে, যারা এদের স্পেস দিসে তাদের জন্য গত পঞ্চাশ বছরের তুলনায় অধিক জিল্লতি অপেক্ষা করসে!’।

মাহফুজের দুই স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে- বিপক্ষে আলোচনা- সমালোচনা চলছে। প্রথম স্ট্যাটাসে অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী যখন মাহফুজের পক্ষে অবস্থান নেন ঠিক দ্বিতীয় স্ট্যাটাসের কারণে তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ জামায়াত-শিবিরের যেমন সমালোচনা করছেন ঠিক তেমনই মাহফুজের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। এমন কি মাহফুজ কোনো গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে উপদেষ্টা পদে নেয়া তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। একজন লেখেন, ‘বাংলাদেশে সব দলের বিপক্ষে বলা যাবে কিন্তু জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বলা যাবে না, বললেই সবাই মিলে হামলে পড়বে। আর যদি কখনো তাদের খারাপ সময় আসে তখন হয়তো এই দলে- সেই দলে ঘাপটি মেরে থাকবে, আবার একটু সুযোগ পেলেই সেই আগের রূপে ফেরত যাবে। বিএনপি’র সমালোচনা করলে কিন্তু এইটা হয় না, কিংবা অন্য যেকোনো দলের। খুবই অদ্ভুত ব্যাপার মুক্তিযুদ্ধের টপিক উঠলেই একদম দিশাহারা হয়ে যায় এরা। যেখানে তাদেরই অনেক সিনিয়র নেতা মুক্তিযুদ্ধের ভুল অবস্থানের সমালোচনা নিজেরাই করেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *