নবযাত্রা প্রতিবেদক
অগ্নিদগ্ধে পোড়া গন্ধ আর আহতদের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স আর সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এসে একের পর এক থামছে জরুরি বিভাগের সামনে। আর আগত মানুষরাও স্বজনকে খুঁজে পেতে সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে যাচ্ছেন। বিরতিহীন তাদের ছুটে যাওয়ার দৃশ্য এখন ওয়ার্ড থেকে মর্গে।
শনিবার (৫ জুন) বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজে যান নাছির । আগুনের ঘটনার পর তার খোঁজ মিলছে না। বন্ধ রয়েছে তার মুঠোফোনও। এ অবস্থায় চরম আতঙ্কে রয়েছে তার পরিবার। বাবাকে খুঁজতে রাত থেকে বিএম কনটেইনার ডিপো ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন তার মেয়ে ফাতেমা আক্তার।
তিনি বলেন, আমার বাবা শনিবার কাজে যোগ দেন। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর থেকে বাবার ফোনে কল দিচ্ছি, কিন্তু মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম সেখানেও তার খোঁজ পাইনি। সকাল থেকে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে খুঁজছি কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি। আপনারা আমার বাবাকে খুঁজে দেন, এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাতেমা।
ছোট ভাই মনির হোসেনকে খুঁজতে সীতাকুণ্ডের সরকারহাট এলাকা থেকে এসেছেন আবদুল করিম। তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় কাজে যোগ দেয় মনির। বিএম ডিপোতে অপারেটর হিসেবে কাজ করত সে। রাতে ৯টার দিকেও স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে মনিরের। কিন্তু আগুন লাগার পর থেকে আর কথা হয়নি। হাসপাতালে খুঁজছি সকাল থেকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ পাইনি। মনির ৮ মাসে আগে বিয়ে করেছে। মনিরের বউ চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার যদি কিছু হয় তাহলে অনাগত সন্তানের কী হবে?
অন্যদিকে রবিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনদের খোঁজে ভিড় করছেন অনেকেই। এর মধ্যে কেউ কেউ স্বজনের খোঁজ পেয়েছেন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে, কাউকে পাচ্ছেন মর্গে।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৪১ জন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি পাঁচ শতাধিক। তাদের মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীও রয়েছেন। আহতদের চমেক হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
Attachments area