বৈদেশিক ঋণ শোধে রেকর্ড চাপ, নতুন সরকারকে নিতে হবে কঠিন পরীক্ষায়

নবযাত্রা প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। সাম্প্রতিক অর্থবছরে বিদেশি ঋণ শোধের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণের আসল ও সুদ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে, যা আগে কখনো হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ঋণ পরিশোধের চাপ চলতি অর্থবছর আরও বাড়বে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আসন্ন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ধাক্কা। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশ আর concessional loan বা সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবে না। একই সঙ্গে বিদ্যমান ঋণের সুদের হারও ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, এক দশক আগেও বছরে গড়ে ১০০–২০০ কোটি ডলারের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হতো। এখন সেই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে চারগুণ বেশি। শুধু গত অর্থবছরেই আসল শোধ করতে হয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার এবং সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে আরও ১৫০ কোটি ডলার।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার দায়িত্বে আসবে কয়েক মাসের মধ্যেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদেশিক ঋণ শোধ এখন নতুন সরকারের অন্যতম বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে, এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে উঠবে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে অপ্রয়োজনীয় খাতে ঋণ নেওয়ার ফলে আজকের এই চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “যে সব প্রকল্পে বিনিয়োগের টেকসইতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল, সেগুলোই এখন অর্থনীতির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করছেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা দেশের মর্যাদা বাড়ালেও ঋণ ব্যবস্থাপনায় এটি বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। তাই আগামী সরকারের জন্য অন্যতম বড় কাজ হবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কৌশল নির্ধারণ করা এবং নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *