নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে এসেছেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ ছুটে এসেছেন সুদূর প্রবাস থেকে। শুধু একবার স্কুল জীবনের বন্ধুদের দেখার ইচ্ছে থেকে। একে অন্যকে দেখার সাথে সাথেই আবেগে আপ্রত হয়ে জড়িয়ে ধরছেন। মেতে উঠছেন গল্প আর আড্ডায়। স্মৃতিতে বিভোর হচ্ছেন কিছু মহুর্তের জন্য। ১৯৬৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ৫৫ ব্যাচের সহস্রাধীক ছাত্রের উপস্থিতিতে এমনই আবেগ আর ভালোবাসার মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ সরকারি হাই স্কুলের প্রাঙ্গণ।
গতকাল শুক্রবার জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ সরকারি হাই স্কুলের ৫৫ বছর পূর্তি উদযাপনের আয়োজন করেন স্কুলের এলামনাই এসোসিয়েশন। দুইদিনের এ উৎসবের উদ্বোধনী দিনে আনন্দ র্যালী, স্মারক বিতরণ ও ‘রোল কল’ নামক স্মারক ম্যাগাজিন উদ্বোধনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এড. শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হাই জাহাঙ্গীর জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মার্চ পাস’র মাধ্যমে স্যালুট গ্রহণ ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এসময় এলামনাই আড্ডা, নতুন কার্যকরী পরিষদের পরিচিতি, স্মৃতিচারণ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এসময় স্মৃতিচারণ করেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব এবিএম আজাদ। তিনি বলেন, আমি এ স্কুলের ১৯৮০ ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এরমধ্যে দীর্ঘ ৪৩টা বছর পার হয়ে গেছে। আমার কর্মজীবন এবং ব্যক্তি জীবনের মধ্যে অনেক নামি দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। আমি নিজেও পড়াশোনা করেছি। কিন্তু এ বিদ্যালয়ের কাটানো সেই দিনগুলোই ছিল সেরা। যে কারণে এখনো স্কুলটি আমার আবেগের জায়গা জুড়ে আছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়ে এসেছি। যতবারই আসি না কেন সবসময়ই খুব ভালো লাগে। এখানে যে বন্ধনটা তৈরি হয়েছিল সেটি ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধন। এমন বন্ধ আর কোথাও তৈরি হয়নি। স্কুল জীবনটা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলা চলে। ব্যক্তি জীবনে যত বড়ই হইনা কেন, এখনো এ স্কুলের বন্ধুদের দেখলে সেই স্কুল জীবনের স্মৃতিতে ফিরে যাই। আজকে অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। খুব ভালো লাগছে। মনে চায় আবার আসি ফিরে সেদিনগুলোতে। আমি যখানেই থাকিনা কেন আমার স্কুলের কোনো খবর পত্রিকার পাতায় দেখলে সেটি আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। ভালো কোনো খবর দেখলে খুব ভালো লাগতো। আর খারাপ দেখলে মনতটা খারাপই লাগতো। নাসিরাবাদ সরকারি স্কুলের সফলতা কামনা করছি আমি।
আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রফেশনাল একাউন্টেন্ট আহসানুল বারী (এফসিএমএ) বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। খবরটা শুনেই শত ব্যস্ততার মধ্যেও ছুটে আসি। স্কুলের মাটিতে পা রেখে শরীরটা যেন শীতল হয়ে গেছে। আগের সেই খেলার মাঠ। এ খেলার মাঠে আমরা কত খেলেছি তার কোনো হিসেব নেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবন জটিল হয়ে গেছে। জীবনের একটা পর্যায় এসে বুঝতে পারি জীবনের সোনালী দিন ছিল স্কুল জীবনে কাটানো দিনগুলো, বন্ধুদের সাথে কাটানো সেই সময়গুলো। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৭ সালে। আমি ভর্তি হই ১৯৬৮ সালে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৯৭৩ সালে। আমিই প্রথন ছাত্র যে স্কুল সংসদের নির্বাচিত সাধারাণ সম্পাদক ছিলাম। তখন স্কুলের সব রকম সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিলাম। আমরা যখন পড়ালেখা করতাম তখন আমাদের শ্রেণিতে মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী ছিল। এখন শিক্ষার হার বেড়েছে। এক এক ব্যাচে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থীও আছে। কিন্তু আমাদের সময়ে স্কুলের যে স্ট্রাকচার ছিল সেটি তখনের জন্য ঠিক থাকলেও এখনের জন্য ঠিক নয়। বিদ্যালয়টি কেমন যেন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেখে খারাপ লাগছে। স্কুলে স্থাপনাগুলোর দিকে নজর দেয়া দরকার। যেহেতু এটি সরকারি ঐতিহ্যবাহি স্কুল তাই সরকারকে এর দিকে নজর দেয়া দরকার।
বেসিক ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট জেনারেন ম্যানাজার ইকামুল বারী নামের প্রাক্তন ছাত্র বলেন, আমাদের সময়ে জুনিয়র সিনিয়রদের মধ্যে অসাধারণ মিলমিশ ছিল। স্কুল জীবনের বন্ধুদের এখনো যেখানেই দেখি বুকে জড়িয়ে ধরি। খুব শান্তি লাগে। সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাই। ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্ক ছিল অসাধারণ। তাদের অবদানে আজকে আমরা এ পর্যায়ে এসেছি। আমি চাই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানগুলো এ স্কুল থেকে জন্ম হোক।
রাতে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব এবিএম আজাদ, শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোর্শেদ আলম ও এনএইচটি হোল্ডিংস’র ম্যানিজিং ডিরেক্টর মেহরাজ বিলকিস। আরো উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান, কার্যকরী পরিষদের সম্পাদক ম-লীর সদস্য এ. কে. এম আবদুল হান্নান আকবর, শফিক উল আজম, মনির হোসেন ভূঁইয়া, মো. সিরাজুল হক, এবি জিয়াউদ্দিন হোসেন, আরশাদুজ্জামান খান লিপু, দিদারুল আলম মাসুম, মো. মিনহাজুর রহমান নাসিম, মো. হাবিবুল আলম (পেয়ারু), মো. আমজাদ হোসেন।