১৬ মাসে ৭১০ কারাবন্দিকে আইনি সহায়তা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড

১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে প্রথম কেন্দ্রীয় কারাগারে
৮টি লিগ্যাল এইড কর্ণার স্থাপন করা হয়।

মরিয়ম জাহান মুন্নী

ছদ্মনাম মো. শাহজাহান (১৬) চকবাজার এলাকার বাসিন্দা। মাদক মামলায় পাঁচ মাস আগে আটক হয়ে জেলে যায়। বাবাহীন দরিদ্র পরিবারের শাহজাহানের মামলা চালাতে অক্ষম তার মা রুমেলা বেগম। যে কারণে জামিনও হচ্ছে না তার। পরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপন করা লিগ্যাল এইড কণারের সাহায্যে জানতে পারে তার কথা। তারপর আইনি সহযোগিতা পায় শাহজাহান। বর্তমানে তার মামলা লড়ছে লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী। একমাস হলো সে জামিনও পেয়েছে। শুধু শাহজাহানই নয়, গত ১৬ মাসে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা (লিগ্যাল এইড) চট্টগ্রাম জেলা অফিসের সহায়তায় ৭১০ গরীব-অসহায় কারাবন্দিকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। এসব কারাবন্দির মধ্যে পুরুষই রয়েছে ৬০৩ জন, নারী ৭২ জন এবং ৩৫ জন শিশু।


চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের তথ্য অনুসারে, যেসব ভোক্তভূগীরা অর্থের অভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারে না এমন গরীব অসহায় মানুষ যেন আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আবার সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামেই প্রথম গত বছর ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে লিগ্যাল এইড কর্ণার স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে গরীর অসহায় কারাবন্দিরা শতভাগ আইনি সহায়তা পাচ্ছেন সরকারিভাবে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে মাদক মামলা, অস্ত্র মামলা, মারামারি, ধর্ষণ, হত্যা মামলা, কিশোর অপরাধ, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন, দেনমোহর আদায়, ইভটিজিং ও যুদ্ধাপরাধের মামলা।


জেলা লিগ্যাল এইড সহকারী মো. এরশাদুল ইসলাম বলেন, ১৬ মাসে চট্টগ্রামে ৭১০ গরীব-অসহায় কারাবন্দিকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। এসময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২টি। জামিনে বের হয়েছেন ১৭৫ জন কারাবন্দি। বাকি ৪৩৩ জন হাজতির মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮টি লিগ্যাল এইড কর্ণার স্থাপন করার পর ছয় মাসে ৩৪০ জন কারাবন্দি আইনি সহায়তা পেয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে অর্থের অভাবে কোনো আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারছেন না।  


কথা হয় এমন কয়েকজন কারাবন্দি উপকারভোগীর সাথে। তাদের মধ্যে মুনসুরাবাদের মো. ইউসুফ, মোহড়া এলাকার শারমিন বেগম, বায়েজিদের খালেদা আক্তার, সাতকানীয়া উপজেলার জিয়াবুল হোসেন ও আরেক শিশু রাফির মায়ের সাথে।


রাফির মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার ছেলে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় দুই বছর আগে একটা মারপিটের মামলায় জেলে যায়। সে আট মাসের বেশি সংশোধনাগারে ছিল। আমরা গরীর দিন এনে দিন খাই। মামলা চালানোর অবস্থা নেই। তাই মামলা চালাতে পারছিলাম না। পরে লিগ্যাল এইড মামলা পরিচালনা করে। ছেলে জামিনও পেয়েছে।


মুনসুরাবাদ আমিনুল হক কোম্পানী বাড়ির বাসিন্দা মো. ইউসুফ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, জায়গাজমিন সংক্রান্ত কারণে মারামারি হয়। সেই মামলায় আটক হই। এদিকে আমিই পরিবারের একমাত্র রোজকার করা ব্যক্তি ছিলাম। যেকারণে আমার মামলা চালানোর মত কেউ ছিল না। পরে জেলা লিগ্যাল এইডের সহায়তায় মামলা পরিচালনা করা হয়। এখন আমি জামিনে বেরই।


খালেদা আক্তার বলেন, ভাইয়ের বউয়ের করা মিথ্যা মামলায় জেলে যাই। তিন মাসের বেশি জেলও খেটেছি। কিছু দিন হলো জামিন পেয়েছি। আমার মামলা জেলা লিগ্যাল এইড লড়েছেন। কোনো টাকা ছাড়াই জামিনে বেরিয়েছি। মিথ্যা মামলা হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এদিকে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে আমার করা একটা মামলা চলছে। মামলাটি ছিল যুদ্ধাপরাদের বিরুদ্ধে। টাকার অভাবে এখন আর মামলা চালাতে পারছি না। যেকারণে সেই মামলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে পরিচালিক হচ্ছে।


জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এবং সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, কারাবন্দিদের আইনি সেবা সহজিকরণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দেশের প্রথম ‘লিগ্যাল এইড কর্ণার ‘স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে আটটি ওয়ার্ড রয়েছে লিগ্যাল এইডের। আটটি ওয়ার্ড থেকে আট জন কারাবন্দিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যেন কোন ওয়ার্ড থেকে কোন কারাবন্দি আইনজীবী নিয়োগ বা আইনি সহয়তা থেকে বঞ্চিত না হয়। এমন কোনো হাজতির সন্ধ্যান পেলে তারা জেল সুপারকে এ বিষয়ে অবগত করে। ফলশ্রুতিতে অসহায় ও দরিদ্র কারাবন্দিরা তথা বিনা বিচারে আটক ব্যক্তিদের শতভাগ আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *