বিআরডিবি কার্যালয়ের সহায়তায়
কৃষি, বিত্তহীন সমিতি/ প্রকল্প
থেকে ঋণ সহায়তা নেন তিনি।
ইসমাইলের তৈরি প্রতিষ্ঠান ও খামার
বাড়িগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে
আরো ১০ জনের।
মরিয়ম জাহান মুন্নী
শূন্য থেকে শুরু। এখন কোটি টাকার উদ্যোক্তা সন্দ্বীপ উপজেলার গোরার বাড়ী পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ড, হরিশপুর গোরার বাড়ী গ্রামের ছেলে মো. ইসমাইল। ঘরে তার গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ, উঠোনভরা হাঁস-মুরগি, কবুতর, মাঠ ভরা শাকসবজি-ফসল আবার দুইটি ফ্রিজ ও ইলেক্ট্রনিকের দোকানের মালিক তিনি।
তবে জীবনের শুরুটা এতটা সহজ ছিল না তার। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে খুব অভাবেই দিন কাটতো তার। নানা উত্থান পতনের পর আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকায় সবার কাছে এখন তিনি অনুকরণীয়। তার তৈরি প্রতিষ্ঠান ও খামার বাড়িগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে আরো ১০ জনের। নিজ এবং পরিবার-পরিজন, আত্মিয়-স্বজনের চাহিদা মিঠিয়ে এখন তিনি পরিচালনা করেন মাদ্ররাসা, মক্ত্যব ও এতিক খানা। দাম দক্ষিনা ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ান সমাজের অসহায় গরীব মানুষদের। আজকের এ ইসমাইলকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পথের দিশা দেখান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। তার সাথে আলাপ কালে এমনটাই জানান তিনি। উপজেলা বিআরডিবি কার্যালয়ের সহায়তায় ইসমাইল বিভিন্ন রকম কৃষি, বিত্তহীন সমিতি/ প্রকল্প/ কর্মসূচী থেকে ঋণ সহায়তা নেন। এভাবেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে।

তবে প্রথম দিকে নিজেকে উদ্যেক্তা রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য ইসমাইল এক যুগ আগে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার নিকট পরামর্শ নেন। তারপর সেই কর্মকর্তা তাকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মৎস্য চাষের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পরার্মশ দেন। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে তিনি বিআরডিবি কর্তৃক পরিচালিত বিত্তহীন সমবায় সমিতির শাখা ‘হরিশপুর বামনারপুল বিত্তহীন সমবায় সমিতি’র সদস্য হন। প্রথম বারই তিনি ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই টাকায় তিনি মৎস্য চাষ শুরু করেন। প্রথম বার মৎস্য চাষে আট হাজার টাকা লাভ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পূর্বের ঋণ পরিশোধ করে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ঋণ দিয়ে মাছ চাষের আওতা বাড়ান। এরপর জমানো টাকার দিয়ে ২০২০ সালে বিআরডিবি’র সন্দ্বীপ উপজেলা অফিস হতে মাত্র ৪ শতাংশ সেবামূল্যে তিন লক্ষ টাকা কোভিড-১৯ প্রণোদনা ঋণ নেন। সেই টাকায় সন্দ্বীপ পৌরসভায় ১টি ফ্রিজের দোকান দেন। বর্তমানে তার সেই দোকানে দৈনিক গড় বিক্রির পরিমান প্রায় দুই লক্ষ টাকার বেশি। সেই দোকানে ৩ জন কর্মচারী কাজ করছে। এছাড়া ২ বছর আগে তিনি আরেকটি ইলেক্ট্রনিক্স দোকান দিয়েছেন। এখানেও আরো ১ জন কর্মচারী কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি তার বাড়িতে ১টি বয়লার ও লেয়ার মুরগীর পোল্ট্রি ফার্ম দিয়েছেন। সেখানে স্ত্রীসহ ৩ কর্মচারীর সহযোগিতায় এ পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালিত করেন। গড়ে প্রতিদিন এ ফার্মে ব্যয়লার মুরগী ও ডিম বিক্রি হয় প্রায় ২০ হাজার টাকার।
মো. ইসমাইল বলেন, আমার এবং আশে পাশের এলাকা হতে কয়েকজন জমির মালিকের কাছ থেকে ৪ টি পুকুর ইজারা নিয়েছি। পুকুরের ধরন অনুয়ায়ী প্রতিটি পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছি। এই পুকুরগুলো দেখা শোনা জন্য ২ জন কর্মচারী রয়েছে। এখান থেকে বছর শেষে মাছ বিক্রি করি প্রায় ৭৫ লাথ থেকে ৮০ লাখ টাকার।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কর্তৃক পরিচালিত বিত্তহীন সমবায় সমিতি ‘হরিশপুর বামনারপুল বিত্তহীন সমবায় সমিতি’র সদস্য হই। তারপর সেখানের সক্রিয় সদস্য হয়ে উঠি। এখন বর্তমানে আমি সমিতির ম্যানেজার। সমিতিতে এখন আমার শেয়ার জমা ১০ হাজার ২৩০ টাকা এবং সঞ্চয় জমা আছে ৪০ হাজার ২৬০ টাকার। প্রথম বার ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করে সেই টাকায় মৎস্য চাষ শুরু করি। তারপর থেকে আমাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। এখন আমার সব মিলে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি সম্পদ আছে। যার সবই আমার কষ্টার্জিক পরিশ্রমের আয় দিয়ে অর্জন করা। আমি ভিটেবাড়ীসহ প্রায় ২০ শতক জমি ক্রয় করি। ছোট তিন ভাইয়ের জন্য ১৮ শতক ভিটেমাটিসহ জায়গা কিনে বাড়ী তৈরী করে দিয়েছি। পাশাপাশি ১টি এতিমখানা, ১টি মসজিদ এবং ১টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা আমার অর্থায়নে চলে। মাদ্রাসায় অসহায় ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পড়ালেখার ব্যবস্থা করি। এনজিও এবং জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় শতভাগ স্যানিটেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ডিপ টিউবয়েল স্থাপন করছি। বাড়ীর লোকজনের সুবিধার্থে পাকা রাস্তা করে দিয়েছি।