উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা

নবযাত্রা প্রতিবেদক

চার দিকে বইছে নির্বাচনের পালের হাওয়া। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবার মনে লাগছে এ হাওয়া। চা দোকানে বসছে আড্ডা। আর কয়েক দিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ভোটার কি ভাবছেন ভোট নিয়ে? চট্টগ্রামের একঝাঁক তরুণ ভোটারের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা। আলোচনায় স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে রাজনীতি নিয়ে বেশ সচেতন তরুণরা। অনেকে আবার দলবল নির্বিশেষে চাইছেন দেশের উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রার্থী। কেউ চাইছেন শিক্ষা, বেকারত্ব ও নারী উন্নয়ন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমবিএ শিক্ষার্থী মো. জাবেদ হোসেন বলেন, ভোটাধিকার দেশের নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। এর মাধ্যমে আমরা শুধু কোনো রাজনৈতিক নেতা নির্বাচিত করি তা নয় বরং আগামী পাঁচ বছরের জন্য একজন অভিভাবককেই নির্বাচিত করি। আমি এবারই প্রথম ভোট দিব। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এবারের জাতীয় নির্বাচনে আমার পছনে থাকছে শিক্ষিত তরুণ প্রার্থী। যে দেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করবে। দেশে জনসংখ্যা বেশি। লাখ শিক্ষিত বেকার তরুণ সঠিক পথপ্রদর্শণের অভাবে অতুলগহবরে হারিয়ে যাচ্ছে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করবে এমন প্রার্থীরাই নির্বাচিত হক। তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান যে অবস্থা এখনই যদি তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে কাজে না লাগায় তাহলে খুব শীঘ্রই দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। তাই তাদের সম্পদে পরিণত করতে কাজ করবে, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করবে এমন প্রার্থী আমি চাই। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এমন স্বচ্ছ প্রার্থীকে পাঁচ বছরের জন্য আমাদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দিতে চাই।
মিরসরাই চট্টগ্রাম-১ আসনের ভোটার এবং রেডিয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক আহমেদ শাহিনুর হাসান ভুঞাঁ বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এটাই একটি দেশের স্বাভাবিক নিয়ম হওয়ার কথা। কিন্তু এখন দেশে যে নির্বাচন আমরা দেখি সেখানে এমন পরিবেশ আশাই করা যায় না। একজন নাগরিক হিসেবে আমার চাওয়া ভোট কেন্দ্রে যেন সাধারণ মানুষ গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীতে ভোট দিতে পারে। এছাড়া নির্বাচিত প্রার্থী যেন মুখে যা বলবেন তাই যেন বাস্তবে করেন। দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে, সামনে আরো হবে। কিন্তু এ দিয়ে আমাদের মত সাধারণ মানুষের পেট ভরে না। ভোগ্যপণ্যের দামের পাগলা ঘোড়ার সাথে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই দৌঁড় প্রতিযোগিতায় তাল মেলাতে পারছে না। দেশের সাধারণ মানুষ যেন তিন বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে সেই পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকের কালো ছায়া সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে। কঠোর হাতে মাদক নির্মলে কাজ করবে এমন প্রার্থী আমাদের প্রয়োজন। দলবল নির্ভিশেষে সাধারণ মানুষ যেন তার ঘরে পরিবার নিয়ে নিরাপদে রাত কাটাতে পারে সমাজে এমন পরিবেশ তৈরি করে দিকে হবে। বাবা-মায়েরা সন্তানদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠায় পড়াশোনা করার জন্য। কিন্তু সেখানে অপরাজনীতির কারণে তাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

চট্টগ্রাম-৮ আসন বোয়ালখালী ভোটার সারোয়ার ফারুক ও আনজুমান আক্তার রুমি বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে আমাদের একমাত্র চাওয়া কালুরঘাট সেতু নতুন করে নির্মান করা। এ সেতু আমাদের বোয়ালখালীবাসির জন্য পুলসিরাতের মত। এলাকার বাসিন্দারা যারা চাকরি, পড়ালেখা, চিকিৎসার জন্য শহরে আসে তারাই একমাত্র জানে কষ্ট কি। এখন যে ফেরি চালু হয়েছে এটি দূর্ভোগের আরো অন্ত নেই। কত রুগীযে হাসপাতালে আসতে আসতে মারা গেছে। কত গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের তার কোনো হিসেব নেই। দেশ উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সেই উন্নয়নের ছৌঁয়া আমরা পাচ্ছি না। এটি অস্বীকার করতে আমাদের বাদবে না। এখানে একটা কথা এখন শোনা যায় ‘যে নেতাই কালুরঘাট ব্রিজ নিয়ে কথা বলেন সেই মারা যায়’। এবারের নির্বাচনে যেই আসুক আমরা বোয়ালখালীবাসি তার জন্য দোয়া করি সে যেন বেঁচে থাকেন এবং সুন্দরভাবে কালুরঘাট ব্রিজ নির্মাণ করে আমাদের রক্ষা করেন।

গৃহিণী জান্নাতুর ফাহিম পলি বলেন, আমি সম্পন্ন নতুন ভোটার। তাই ভোট নিয়ে আমার আলাদা একটা উৎসাহ আছে। কিন্তু জানিনা আমি ভোট দিতে পারবো কি না। তবে আমি আমার নির্বাচনী এলাকাই নয় শুধু, সারাদেশ ব্যাপি এমন প্রার্থীদের চাই যারা নারীদের উন্নয়নে, বেকারত্ব দূরিকরণে ও নারী ক্ষমতায়নে কাজ করবে। নারীরা সুযোগ পেলে অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখতে পারে এটি প্রমাণিক। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নারীদের পিছিয়ে পড়তে হয়। বর্তমান সরকার নারীদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি প্রতন্ত্য অঞ্চলেও পৌঁছে দিতে হবে। করোনার পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল হয়ে পড়েছে। এতে নানা ক্ষেত্রে নারীরা অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে, পিছিয়ে পড়েছে। যেকারণে নারীদেরকে আবার সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এটি পত্রপত্রিকার খবর দেখলেই বুঝা যায়। আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাই শুধু আমার এলাকা নয়, সারাদেশ জুড়ে নির্বাচনি হাওয়া বইছে। এ হাওয়ায় যেন কোনো ভুল প্রার্থী না এসে নারীদের উন্নয়নে কাজ করবে, দেশের উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রার্থীই ক্ষমতায় আসুক।
হালিশহর চট্টগ্রাম-১০ আসনের ভোটার এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গৃহিণী নাবিলা ইবনাদ বলেন, স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চাই। সব জায়গায় প্রভাব খাটানো ভালো লাগে না। আমাদের শহরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কত এমপি, মন্ত্রী আসে যায় আমাদের নগরবাসির দুঃখ খ-েনা। এ শহরের সব চেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। এনিয়ে খুব একটা কাজ হয় না। আমি চাই এবারের নির্বাচনে শুধু আমার এলাকার প্রার্থীর কাছেই নয়, বরং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে যত এমপি নির্বাচিত হবেন সবাই যেন জলাবদ্ধতা নিরসনে এক সাথে কাজ করেন।
হাটহাজারী চট্টগ্রাম-৫ আসনের ভোটার এবং হোটেল এন্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী তানজিমা আক্তার বলেন,
বাংলাদেশের মোট ভোটার সংখ্যার ৬০শতাংশই তরুণ ভোটার। তাই তরুণরা দেশের রাজনীতির অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অংশ। দেশের একজন নবীব ভোটার হিসেবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার এলাকার প্রার্থীদের কাছে আমার চাওয়া সুষ্ঠু পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীতো আর যেনতেন হলেই হবে না। কারণ এ পাঁচ বছর তিনিই হবেন আমাদের অভিভবক। তাই অভিভাবক হতে হবে জন মানুষের কল্যান সাধনে বদ্ধপরিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *