ইসির সংলাপে যা বললেন পেশাজীবীরা

নবযাত্রা ডেস্ক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রেওয়াজ অনুযায়ী সবার মতামত নিতে সংলাপ শুরু করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় গত ১৩ মার্চ প্রথম দফায় দেশের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বসে ইসি। দেশের ৩০ শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানায় ইসি কিন্তু সংলাপে এসেছিলেন মাত্র ১৩ জন।

সেই ধারাবাহিকতায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি আজ (মঙ্গলবার) বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। আজকের সংলাপে ৩৭ জন পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানালেও ইসির ডাকে সাড়া দিয়েছেন মাত্র ১৯ জন।

তারা হলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্টার ফর আরবার স্টাডিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিনহা এমএ সাঈদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জহুরুল আলম, ঢাবির অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক এসএম শামীম রেজা।

সংলাপে গিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সত্য বলতে হবে। বিএনপির ইসিকে বয়কটের বিষয়টি সামনে এনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এটি কঠিন সমস্যা, দেশের বিরাট একটি রাজনৈতিক দল বয়কট করে বেড়াচ্ছে। এটা সমস্যা। এর সমাধান করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ ইসিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদ অকার্যকর করে রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ মাসের জন্য সংসদ অকার্যকর রাখতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ইসিকে প্রস্তাব করেন তিনি। নির্বাচনকালীন প্রশাসন নিরপেক্ষ রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভোটের সময় মূল ভরসা হলো মাঠ প্রশাসন। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার ৪ মাস আগ থেকে ভোটের ২ মাস পর পর্যন্ত প্রশাসনে নিয়োগ-বদলি ইসির নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জোর সুপারিশ করে সাবেক এই আমলা বলেন, ইভিএম সবসময় সব দেশে বিতর্কিত। ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, আস্থা অর্জন করতে পারলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। আস্থা অর্জিত হলে সবাই ভোটে আসবে।

বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবেন আপনারা। প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আপনাদের পক্ষে আছি।’তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরণ, কেমন নির্বাচন হবে- এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্যে আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কিনা তা চিহ্নিত করুন আপনারা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, সাহসী নির্বাচন কমিশন দরকার। গত কমিশনের অনেকগুলো দুর্বলতার একটি ছিল নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। তখন একজন আলাদা সংবাদ সম্মেলন করতেন। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে আস্থা কমে যাবে। ইচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব- তা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার পরিবেশে যত সৎভাবেই কাজ করা হোক ইভিএমে ভোট হলে তার ফলাফল নিয়ে সংশয় তৈরি হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা যাতে কাজ করতে পারেন নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের আগে পরে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা বিশিষ্টজনদের প্রস্তাব ও পরামর্শ শুনেছি। এগুলো পর্যালোচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে তা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনটাকে যদি অবাধ, সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটা সকলের অংশগ্রহণে হয় সেটা সফলতা হতে পারে। শতভাগ সফলতা হয়ত হবে না; কেউ কেউ বলেছেন ৫০-৬০ শতাংশও যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটাও বড় সফলতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিশনকে সাহসী হতে হবে। সাহসের সঙ্গে সততাও থাকতে হবে। জীবনের শেষ প্রান্তে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিশিষ্টজনদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *