চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা বিভাগ থেকে ৫ বছরে ২০ শতাংশ উপকারভোগী ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন

নবযাত্রা প্রতিবেদক

পিতৃহীন তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছিলেন ছকিনা বেগম। এমন সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আলো খুঁজে পেলো ছকিনা বেগমের পরিবার। ষাটোর্ধ্ব এ নারী মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন প্রায় পাঁচ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সংস্থাটি থেকে ১০ হাজার টাকার দরিদ্র দুরিকরণে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাঁশ ও বেতের কাজ। বলা যায়, এরপর থেকেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি। পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধ করে আরো দুইবার ৩০ হাজার করে ঋণ নিয়ে ছাগল ও হাঁস পালন শুরু করেন। এভাবেই ভাগ্যের চাকা ঘুরান স্বামীহীন ছকিনা বেগম। ইতিমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন এক মেয়েকে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ছকিনা বেগমের মত গত ১০ বছরে স্বাবলম্বী হয়েছেন ১০ হাজার ৭০৬ জন উপকারভোগী।
খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ের ১৫টি এবং শহর পর্যায়ের আরো তিনটি কার্যালয়সহ চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা বিভাগ থেকে গত ৫ বছরে যে তিন লক্ষাধিক লোক ভাতা পেতেন এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ উপকারভোগী আলাদাভাবে ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, এ জেলায় ১০ বছরে ১৮টি ইউনিটে (কোন খাতে?) ২৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সরকার। এই বিনিয়োগের আওতায় আলোচ্য সময়ে ঋণ গ্রহণ করেছেন ১০ হাজার ৭০৬ জন উপকারভোগী। সর্বনি¤œ ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত এ ঋণ সম্পূর্ণ সুদমুক্ত। তবে যে ১০% টাকা নেয়া হয়, সেটাকে কি বলা হয়?
সমাজসেবা কর্মকর্তারা জানান, এ ঋণগুলো মূলত পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ঋণ, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ঋণ, দরিদ্র দূরীকরণে ঋণ, চা শ্রমিকদের আর্থিক অনুদানসহ বিভিন্ন খাতে দেয়া হয়েছে।
কথা হয় সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্রঋণ খাতে ঋণগ্রহীতা রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের নদিমপুর গ্রামের বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শেখ মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিনের সাথে।

ঋণ নিয়ে সফল হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আমার দুই চোখই নষ্ট হয়ে যায়। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। পরে দৃষ্টিগত সমস্যা আর পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে বিয়ে করি, কিন্তু আমি ও আমার পরিবার বড় ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। আমি উপজেলা সমাজসেবা থেকে আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পেতাম। পরে সেখানে ঋণ প্রস্তাব করি। প্রথমেই ৩০ হাজার টাকা পাই। সেই টাকায় সবজি চাষ শুরু করি। সেখানে উন্নতি হলেই আমি আরো দুইবার ঋণ নিয়ে একবার মাছ চাষ শুরু করি এবং শেষ ঋণ দিয়ে একটি কলা বাগান করি। বর্তমানে আমার মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় আসে তিন জায়গা থেকে। আমার দুই মেয়ের মধ্যে প্রথম মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে ও দ্বিতীয় মেয়ে প ম শ্রেণীতে পড়ছে। এখন আমার বেশ ভালোই দিন কাটচ্ছে পরিবার নিয়ে। এসবই সম্ভব হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায়।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওয়াহিদুল আলম বলেন, প্রতি বছরই সেবার পরিধি বাড়ছে। নানা জটিলতার মধ্যেও ১০ বছরে বেড়েছে সেবার পরিধি। নতুন করে দুইটি সেবা বাড়ানো হয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। এছাড়াও আরো কিছু সেবা যোগ হবে। এ সেবাগুলো পাবেন, কামার, কুমার, নাপিত, মুচি, বাঁশ-বেত, কাঁসা-পিতল প্রস্তুতকারীদের তালিকা তৈরিতে অনলাইনে জরিপের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সমাজসেবার আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এককালীন পুঁজি দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ১০-৩০ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছি। তবে আমরা সর্বনি¤œ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত যেন ঋণ দিতে পারি সেই প্রস্তাব করেছি। এ প্রস্তাব যদি গ্রহণ করে তবে আগামীতে আমরা আরো বেশি টাকার ঋণ দিতে পারবো। এভাবেই আমরা সেবার পরিধি আরো বাড়াবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *