নবযাত্রা প্রতিবেদক
বিজ্ঞানে এখনো নারীরা পিছিয়ে। আমি চাই দেশে ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিসিএস ক্যাডার, এডভোকেট কিংবা সাংবাদিকের মত ‘আমি বিজ্ঞানী হব’ এমন স্বপ্ন দেখুক নারীরা। এখন নারীদের নিয়ে কাজ করছি। কারণ, আগে সমাজে সমতা তৈরি করতে হবে। তারপর সেই সমতা আসলেই নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের তরুণ অণুজীববিজ্ঞান ড. সেঁজুতি সাহা।
গত রবিবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়াম হলে দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে ধারাবাহিক আড্ডা ১২তম পর্বের ড. সেঁজুতি সাহার বিজ্ঞানী হওয়ার গল্প নিয়ে আড্ডার আয়োজন করে।
আড্ডায় তরুণ এ বিজ্ঞানী বলেন, বিজ্ঞানী হওয়ার ফেছনের গল্প। তার এ গল্প শুনতে অডিটরিয়ামে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।
আয়োজনটিতে সভাপতিত্ব করেন, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুল। যুগ্ম সম্পাদক সাইফদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় ড. সেঁজুতি বলেন, ছোটবেলায় গোয়েন্দা হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। আবার বাবা-মা দুইজনই অণুজীববিজ্ঞানী ছিলেন। তাদেরকে দেখে বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছেও জন্মায়। তাই একটা বয়সে গিয়ে মনে মনে ভাবি আমি গোয়েন্দ প্লাস বিজ্ঞানী হবো। তবে এটা কি করে সম্ভব? তিনি বলেন, জীবানুগুলোকে আমি চোর ভাবি, আর বিজ্ঞান চিন্তা দিয়ে তাদের খুঁজে বের করি। এভাবেই হয়ে উঠি অণুজীববিজ্ঞানী প্লাস গোয়েন্দা। বর্তমানে তিনি আণবিক জিনতত্ত¡ নিয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) কর্মরত আছেন। বাংলাদেশে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাসও উন্মোচন করেন তিনি।
আলাপনের তিনি বলেন, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনবিক জিনতত্তে¡ পিএইচডি করি। উচ্চ শিক্ষা থেকে মাটির টানে দেশে ফিরে আসি। কারণ আমার মা-বাবা শিখিয়েছেন এবং দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। তাই পড়াশোনা শেষ করে সে দেশে পড়ে না থেকে দেশেই চলে আসি।
আড্ডার মাঝখানে যুক্ত হন, ইপসার সমন্বয়ক মো. আলি শাহিন। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য প্রয়োজন সেঁজুতি সাহার মত গুণি মানুষদের। তাদের থেকে শিখার আছে জানার আছে। বর্তমান প্রজন্ম মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত। তারা কিছু হলেই আত্মহত্যার মত ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে দিধাবোধ করে না।
ড. সেঁজুতি আবার বলেন, এখন মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি। কারণ মেয়েরা এখনো অনেক ফিছিয়ে। নারীরা একটু এগিয়ে আসলেই আগামীতে পুরুষদের নিয়েও কাজ করবো। এছাড়া দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আমাদের সিএইচআরএফ’এ কেউ ইন্টার্নশিপ করতে এপ্লাই করলে আমরা তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আমি বিজ্ঞানী হব এ কথাটাই বলুল। তারউপর এ পেশায় নারীদের অবস্থান একেবারে নেই বললেই চলে। তাই আমি চাই আগামীতে এ পেশায় হাজারো নারী আসুক। এখন শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন গ্রামা লে কাজ করছি।
এবার আড্ডার মাঝখানে অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. অলক পাল ও সানশাইন গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাফিয়া গাজী রহমান।
তারা বলেন, প্রতিটি সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিশোর বয়সে বাবা-মায়ের অনেক কথাই সন্তানের পছন্দ হয়ে না। তাই অনেকে রাগ করে ভুল পথে চলে যায়। আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার মত খারাপ কাজটিও করে থাকে। এটি কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু আজকে যদি বাবা-মায়ের কথা শুনে নিজেকে বদলিয়ে সামনে এগিয়ে যায় তবে একদিন সফলতার মুখ দেখবেই।
এরমধ্যে নেয়া হয় শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন। শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের জবাবে সেঁজুতি সাহা বলেন, আমার এ জায়গায় আসাটা মোটেও সহজ ছিলনা। আমি প্রথম যখন গবেষণা পত্র জমা দিই, বাংলাদেশি বলে আমিও অবহেলার শিকার হই। তবে একটা সময় এটি প্রকাশ হয়। এভাবে জীবনে চলার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। সেই প্রতিবন্ধকতা দেখে থেকে থাকলে হবে না। এগিয়ে যেতে হবে আর একদিন সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। ড. সেঁজুতি সাহা আর শিক্ষার্থীদের প্রায় তিন ঘণ্টার আড্ডা শেষ হয় রাত আটটায়।