নবযাত্রা প্রতিবেদক
‘প্রাপ্তি নয়, ভালোবাসা জমে বিরহে’। এমন একটি বিষয় তুমুল ঝড় উঠে শিল্পকলার অডিটরিয়াম হলে। যুক্তি তর্কে পক্ষে বিপক্ষে ঝড় তুলেছেন ছয় বক্তা। কেউ বলছেন প্রাপ্তিতে সুখ, আবার কেউ বলছেন বিরহেই প্রেমের আসল সুখ। প্রায় ৩০ মিনিটের ‘প্রাপ্তি, বিরহের’ এমনই একটি রম্য বিতর্কে নিজের যুক্তি-তর্ক তুলে ধরতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, কবি ও ছড়াকার জিন্নাহ চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী মিলি চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক মাশরুর শাকিল, শিক্ষক ও অভিনেত্রী সাবিরা সুলতানা বিনা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শায়লা শারমিন সাথী।
দৃষ্টি চট্টগ্রামের রম্য বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তারা। তর্কে প্রথমেই ‘প্রাপ্তি নয়, ভালোবাসা জমে বিরহে’ বিতর্কের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন কবি জিন্নহ চৌধুরী। রম্যের সুরে তিনি বলেন, মে বসে আসেন আমারই এক সাথী ওমর কায়সার। যিনি প্রেম তলায় যান বারবার। এটি প্রেমের নেসা ঠিকই তবে তিনি প্রাপ্তি নয়, ভালোবাসেন বিরহকে। তিনি বারবার প্রেমে পড়েছেন বিরহেরই আশায়। তার পাশেই বসে আসেন সাবিরা সুলতানা বিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসাথে পড়তাম। তবে তিনি ছিলেন আমার সিনিয়র। কিন্তু তাতে কি, রাধাকিষ্ণের মধ্যেও রাধা সিনিয়র ছিলেন। আমি তাকে দেখে নিরবে ভালোবেসে গেছি। তবে কখনো পাওয়ার আশায় নয়। তাই প্রাপ্তিতেই নয়, বিরহেই সুখ।
‘প্রাপ্তি নয়, ভালোবাসা জমে বিরহে’ বিপক্ষে অংশগ্রহণ করেছেন সাবিরা সুলতানা বিনা। তিনি বলেন, বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন বিরহ বলে কিছুই নেই, সবই প্রাপ্তি। কারণ এখন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষকে মনে পড়লেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে সংসার জীবন যদি অন্য কারো সাথেও বাধা হয় তবুও সেই সম্পর্ক অমর থাকে। এটাও কিন্তু এক প্রকার প্রাপ্তি।
বিতর্কের পক্ষে মাশরুর শাকিল বলেন, ভালোবাসার মধ্যে বিরহ সত্যিই খুব প্রয়োজন। না হলে ভালোবাসার মাহাত্যই বুঝা যায় না। এই যেমন আদম হাওয়ার মধ্যে বিরহ তৈরি হয়। তারপর দীর্ঘ সময় পর তাদের মিলন হয়। সেই মিলনেই পৃথিবী আজ সেজে উঠেছে। এখানে কিন্তু বিরহের গুরুত্বই বেশি।
এবার বিপক্ষে শায়লা শারমিন সাথী বলেন, আমার স্বামীর সাথে মাঝে মধ্যে রাগ-অভিমান হয়। সেই রাগে ঘুমাতে গেলে দুজন দুই দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকি। তখন জীবনটা আসলেই কষ্টে ভরে যায়। কিন্তু সবকিছু যখন আবার স্বাভাবিক হয় সবকিছুই সুন্দর লাগে। তার মানে প্রাপ্তিই জীবনে সব সুখের মূল। আমি ল্যান্ড ফোনের যুগে প্রেমে পড়ি। সে কি বিরহ! কত কষ্ট করতে হয়েছে সে সময়গুলোতে। আমি সারাক্ষণ প্রাপ্তির অপেক্ষায় ছিলাম। একদিন তাকে পাওয়া হলো। সেদিনই নিজেকে চিরস্থায়ী সুখী মনে হয়।
এবার মিলি চৌধুরী পক্ষে বক্তব্যে বলেন, জীবনে বিরহ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার একটা উদাহরণ হচ্ছে ওমর কায়সার ভাই। তিনি সংসার করছেন জোসনার সাথে কিন্তু কবিতা লিখেন শ্রাবন্তীকে নিয়ে। তার মানে তিনিও বিরহকেই ভালোবাসেন। প্রেমে যদি প্রাপ্তি হয়ে যায় তখন জীবন হয়ে যায় ‘আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম। এ জ্বালা আর প্রাণে সহে না’। ব্যর্থ প্রেম বরাবরই ভালো কারণ সারাজীবনই প্রেমে পড়া যায়। আর প্রেমে প্রাপ্তি হলে জীবনে আর প্রেমে পড়ার সুযোগ থাকে না। তাই বিরহই প্রেমের সার্থকতা।
বিপক্ষের শেষ বক্তব্যে ওমর কায়সার বলেন, কবি বলেছেন, ‘…..যাও সুখের সন্ধানে যায়’। আসলে কোথায় যেতে বলেছে? প্রেমের প্রাপ্তি যেখানে সেখানেই যেতে বলেছেন। একটি কবিতা আছে ‘অপেক্ষাতে অপেক্ষাতে সূর্য ডুবে রক্তপতে, যে টেলিফোন আসার কথা সেই টেলিফোন আসে না’। এই যে বিরহের রক্তপাত এটা সে পায়নি বলে। কিন্তু জীবন সুন্দর হতো যদি তার অপেক্ষায় প্রহর শেষ হত। পৃথিবীতে প্রাপ্তিটাই বড়। তার উদাহরণ হচ্ছে আমরা সবাই। কারণ আমরা সবাই বাবা-মায়ের প্রাপ্তির ফসল। তাই প্রাপ্তিতেই জীবনের সুখ মেনে নিবেন প্রতিপক্ষ বন্ধুরা।