বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেট এখনো জমে উঠেনি ঈদ বাজার

১০-১৫ রমজান পর খতমতারাবি শেষে,
চাকরিজীবীরা বেতন বোনাস পেলে
বাড়বে বেচাবিক্রি।-ব্যবসায়ীরা

তুলনামূলক পোশাকের দাম
কিছুটা কম আছে।-ক্রেতারা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

প্রায় দোকান ক্রেতা শূন্য। দোকানীরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। তবে বাচ্চাদের পোশাকের দোকানে কিছুটা ভিড় ছিল। এসব দোকানে কেনাকাটা নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে চলছে বেশ দরকষাকষি। একেবারে ক্রেতা শূন্য শাড়ি, কসমেটিক, জুতা, বোরকা ও ওড়না- হিজাবের দোকানে। দেখতে দেখতে আট রমজান শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এখনও জমে ওঠেনি বহদ্দারহাটের স্বজন সুপার মার্কেটের ঈদ বাজার। অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বেচাকেনা। তবে সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা বাড়ে বেচাকেনা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত এমনটাই জানায় এখানের ব্যবসায়ীরা।

গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেমন চলছে বেচাকেনা, জানতে চাইলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, বৃহত্তর বহদ্দারহাট গণবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষের মার্কেট এটি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এলাকার মানুষের আনাগোনায় মুখোর ছিল মার্কেটটি। কিন্তু করোনা পরবর্তী গত কয়েক বছরের চিত্র একেবারেই উল্টা। ঈদ, পূজা-পার্বণে সেইভাবে জমে না বেচাবিক্রি। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। ঈদের এসময় বেচাকেনা যেমনটা জমে উঠার কথা এখনো সেইভাবে জমে উঠেনি। তবে আশা করছি ১০-১৫ রমজানের পর খতমতারাবি শেষ হলে ব্যবসা জমে উঠবে। এছাড়া এখন মাসের মধ্য সময়। চাকরিজীবীরা বেতন বোনাস পায়নি। বেতন বোনস পেলে বেচাবিক্রি বাড়বে।

মার্কেটের নিচ তলায় আজমীর ফ্যাশনে রয়েছে বাচ্চাদের বাহারি রঙ্গের পোশাকের সমাহার। রবিবার সরকারি ছুটি হওয়ায় কর্মস্থল বন্ধ ছিল মো. তৌহিদুল পারভেজের। স্ত্রী তাহমিনা ও দুই মেয়েকে নিয়ে এ সুযোগে কেনাকাটা করতে আসেন তিনি। বেশ অনেকগুলো রেডিমেন্ট পোশাক দেখে মেয়ে তুলির জন্য একটি ফতোয়া স্কার্ট পছন্দ করেন। পোশাকটি নিতে দরকষাকষি করে শেষমেষ ৮৫০ টাকায় বড় মেয়ের জন্য কাপড়টি কিনেন।

তৌহিদুল পারভেজ বলেন, আমার দুই মেয়ে, ভাইপো-ভাতিজিয়ে জন্য ঈদের পোশাক কিনতে এসেছি। নিজেদের নিয়ে ভাবছিনা। বাচ্চাদের ঈদ বলে কথা। না হয় এটুকুও কিনতামনা। এখন চাকরি করে বেতন দিয়ে খেয়েপরে বাঁচা দায় সেখানে ঈদের পোশাক কেনার মত বিলাসীতা আমাদের নি¤œমধ্যবিত্তের মানায় না। পোশাকের দামও বেশি। মোটামুটি নিজের সামর্থের মধ্যে দুই মেয়েসহ ভাইয়ের চার বাচ্চার জন্য পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে সব কেনাকাটা শেষ করেছি।  

মেসার্স শাহজী ডিপাটমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুন সত্তর বলেন, বহদ্দাহাটের এ মার্কেটটি মূলত এ এলাকার মানুষ কেন্দ্রীক। এখানে অন্যান্য জায়গা থেকে কাস্টমার আসেনা। যে কারণে এখনো জমে উঠেনি। এছাড়া এটি নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মার্কেট। এ শ্রেণির মানুষরা পোশাক কারখানায় কাজ করে। তারা এখনো বেতন বোনাস পায়নি। বেতন বোনাস পেলে ব্যবসা ভালো হবে আশা করছি।

সরেজমিনে মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট মার্কেটের মধ্যে নিচতলায় বাচ্চাদের পোশাক, থান কাপড়ের দোকান, কসমেটিকসহ সাংসারিক বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। এখানের ছোট-বড় মিলে প্রায় শতাধিক দোকানের মধ্যে বেশিরভাগ বিক্রেতা অলস সময় কাটাচ্ছেন। জানা যায়, শিশু ও অল্পবয়সী তরুণীদের পছন্দের মধ্যে এবার শীর্ষে রয়েছে ‘নায়রা’ আলেয়া ও আফগান স্টাইলের পোশাক। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে তরুণ-তরুণীদের রেডিমেন্ট পোশাক, বুটিক হাউস, শাড়ি, ওড়না-হিজার, বোরকা ও টেইর্লাসের দোকান। এখানেও ছিল না ক্রেতাদের ভীড়। তিনতলায় রয়েছে জুতা, টেইর্লাসসহ আরো কিছু দোকান। এখানে টেইলারিং দোকানে কিছুটা ভিড় থাকলেও তা ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। এছাড়া চারতলায় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রিক রয়েছে। মার্কেটের দোকানগুলোতে পোশাকের মধ্যে মেয়েদের আধুনিক পাকিস্তানি, ভারত এবং দেশীয় বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, টি শার্ট, ফতুয়ার সমাহার আছে। বাচ্চাদের পোশাকের কালেকশন এবং জুতা, কসমেটিক্স, জুয়েলারি রয়েছে। এখানে দেশি এবং ভারতের প্রতি পিস নায়রা বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত। এছাড়া দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানের হরেক নামে বিক্রি হচ্ছে বাহারি পোশাক। যেগুলোর এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

২য় তলার বুটিক হাউস অভিরুচি’র স্বত্বাধিকারি মো. আবু শাহেদ বলেন, বেচাবিক্রি বেড়েছে শবেবরাতের পর থেকেই। কিন্তু ঈদের মৌসুম হিসেবে যে বেচাবিক্রি বাড়ার কথা সেই বেচাবিক্রি নেই। ভোগ্যপণ্যের চড়া দামে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো তাই এমন অবস্থা। কিন্তু আশা করছি কয়েকদিন পর বেচাবিক্রি বাড়বে। তিনি বলেন, আমাদের এ শপিংমলটি নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কেন্দ্রিক মার্কেট। যেকারনে এখানে পোশাকের দাম নগরীর অন্যান্য নামিদামি মার্কেটের চেয়ে কম আছে। আমার দোকানে ১২শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা মূল্যের মেয়েদের পোশাক রয়েছে।

পোশাকের দাম কমার সত্যতা জাচাইয়ে কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, তুলনামূলক পোশাকের দাম কিছুটা কম আছে মার্কেটিতে। নারী ক্রেতা আসমা বেগম বলেন, এখানেরই রাস্তার উল্টো পাশের নতুন মার্কেটে ছেলেবাবুর জন্য একটি পাঞ্জাবি চেয়েছিলাম। একই পাঞ্জাবি সেই মার্কেটে বিক্রি ১৪শ টাকার নিচে বিক্রিই করছেন না। পরে এখানে এসে তিন দোকান খুঁজে একই পাঞ্জাবি কিনেছি ৬৩০ টাকায়।

স্বজন সুপার মার্কেট প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল মনসুর শিকদার বলেন, বহদ্দারহাটের গণবসতি পূণ্য এলাকার মানুষের এখনো ভরসার জায়গা এ মার্কেটটি। যেহেতু এ মার্কেটে বাইরের ক্রেতা নেই তাই নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে স্বল্প দামে উন্নতমানের পোশাক ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো মার্কেট জমে উঠেনি কিন্তু আশা করছি ১০-১৫ রমজান পর মার্কেট জমে উঠবে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে এক এক সময়ে বেচাবিক্রির ধরণ পরিবর্তণ হচ্ছে। যেমন শবে বরাতের পর নারী-পুরুষের থানকাপড় বিক্রি হয়েছিল। এখন শিশুদের পোশাক, তরুণ-তরুণীদের রেডিমেট পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এটি আরো বাড়বে সামনে।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *