রোজার প্রধান ছয় পণ্য পাইকারিতে কমলেও খুচরায় পড়েনি প্রভাব

নবযাত্রা প্রতিবেদক


পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম কমলেও খুচরায় পড়েনি কোনো প্রভাব। সম্প্রতি কাতারে মুসলিম সম্প্রদায়ের সিয়াম সাধনার মাস রোজাকে কেন্দ্র করে এরমধ্যে প্রায় ২০০ পণ্যের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্র একেবারে উল্টো। বরং রোজা শুরুর দু-এক মাস আগে থেকেই দেশের বাজারে বেড়ে যায় রোজা নির্ভর পণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এমনিতে বাজারে আগে থেকেই চড়া সকল নিত্যপণ্যের দাম। আবার রোজাকে সামনে রেখে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো। চাহিদার তুলনায় এসব পণ্যের সরবরাহ ও মজুত পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও বাজারে চড়া ছোলা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও খেঁজুর।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে এ চিত্র একেবারে উল্টো। এখনো চড়া রয়েছে এসব পণ্যের দাম। এদিকে গত তিন বছরে রোজা নির্ভন ছয় পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০-২০ টাক। যা এখনো পাইকারি ও খুচরায় একই রয়েছে।

গত চার বছরে রোজা নির্ভর ছয় পণ্যের বাজার বিশেষণ করে দেখা যায়, রোজা শুরুর এক মাস আগে থেকেই হু হু করে বাড়ে রোজার ৬টি পণ্য ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও খেঁজুর দাম। ২০১৯ সালের রোজায় প্রতি কেজি ছোলা ছিল ৬০-৭০ টাকা। ২০২০ সালে প্রায় একই ছিল। ২০২১ সালে দাম বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা এবং চলতি বছর বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ২০১৯ সালে উন্নতজাতের মসুর ডাল ছিল ৯৫ টাকা। ২০২০ সালে ১০০ টাকা, ২০২১ সালে ১১০ টাকা এবং চলতি বছর ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভোজ্যতেলের দাম কিছুদিন আগে ২০০ টাকা পর্যন্ত হলেও সরকার কমানোর বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়। তবুও সাধারণ ক্রেতার স্বাদের মধ্যে আসেনি তেলের দাম। ২০১৯ সালে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। ২০২০ সালে ১০৫-১১০ টাকায়। ২০২১ সালে আরেক দফা বেড়ে ১৪০ টাকায় এবং এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ইতোমধ্যে সরকার থেকে প্রতি লিটার তেল ১৬০ টাকা বেঁধে দেয়া হলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না বাজারে। প্রতি কেজি চিনি ২০১৯ ও ২০২০ সালে বিক্রি হয়েছে ৬৩-৬৫ টাকা। ২০২১ সালে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। কিন্তু এবার তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা। পেঁয়াজ ২০১৯ সালে বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায়। ২০২০ সালে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে যায়। সেবছর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। আবার গত বছর আমদানি বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ২০১৯ সালে সাধারণ মানের খেজুর কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। ২০২০ সালে ২৫০ টাকা। গত বছর ৩৫০ টাকায় এবং এবার এই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। মান ভেদে বিভিন্ন জাতের খেজুরের দাম কেজিতে প্রায় ১০০-২০০ টাকার বেশি বেড়েছে।

বাজারে ব্যবসায়ীরা জানায়, বিশ্বে করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে পরিবহন খরচ। তাই বেড়েছে সব পণ্যের দাম।

এদিকে করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছে, বেড়েছে বেকারত্ব, কমেছে আয়। কিন্তু ভোজ্যেপণ্যের এমন দামে দিশেহারা প্রায় সব শ্রেণীপেশার মানুষ। একইভাবে চড়া রয়েছে কাঁচাসবজি, মাছ, মাংসের বাজারও।

নগরীর রিয়াজউদ্দিন কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী নরুল ইসলাম বলেন, রোজায় সবজির দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে বেগুন, টমেটো, শসা, গাজর ও কাঁচা মরিচের দাম আরো বাড়বে। কারণ এবারও রোজা হচ্ছে অমৌসুমে। এমনিতেই এসময় এসব পণ্যের সরবরাহ কম থাকে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকে। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *