নবযাত্রা ডেস্ক
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। কর্মসূচি দেখে মনে হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন এক টুকরো ফিলিস্তিন। সবার কণ্ঠেই যেন এক দাবি- ‘গাজার গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াও’।
এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইসরাইলের বর্বরতা রুখে দিতে বিশ্ব মুসলিমকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ আয়োজনে নির্যাতিত ফিলিস্তিনের জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক মোনাজাত পরিচালনা করেন।
এর আগে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় নানা বয়সি মানুষ মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হন। এতে এক হয়েছেন নানান ধর্ম-বর্ণের, সামাজিক সংগঠন ও সব রাজনৈতিক দলের মানুষ।
ইতিহাস সৃষ্টি করে এ কর্মসূচিতে শুধু ফিলিস্তিনের জন্য এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও শিল্পী, কবি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও যোগ দিয়েছেন কর্মসূচিতে। দলমত নির্বিশেষে এক কাতারে সবাই এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও এর পেছনের কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানান।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
শনিবার (১২ এপ্রিল) প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের আয়োজনে এ কর্মসূচির মূল মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। তাদের ডাকা এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বিকেল ৩টায়।
জানা যায় গেছে, বাংলামোটর, কাকরাইল পুরান ঢাকা, গুলিস্তানের জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এক যোগে শুরু হয় এই মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি। একে একে রাজধানীর সব পথ মিলছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকদের ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘গাজা উই আর উইথ ইউ’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’ সহ বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন। পাশাপাশি তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এছাড়াও তেজগাঁও ও খিলগাঁও এলাকায় প্রচুর মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আসতে দেখা গেছে।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে এক মঞ্চে একত্রিত হয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে শিল্পী, কবি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় মুখ। এছাড়াও দল-মত নির্বিশেষে এক কাতারে সবাই যোগ দিয়ে ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে সাহসী উচ্চারণ করছেন।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড, শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। যে কোনো অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সক্রিয় থাকা ও প্রতিরোধ গঠনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে গণজমায়েত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এম তানভীর আহমেদ বলেন, আমরা সতর্কতার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের পতাকা ছাড়া অন্য পতাকা বহন করতে নিষেধ করছি।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী এই গণজমায়েত।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সকাল থেকেই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লোকজন আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নেমেছে সেখানে। সবার কণ্ঠেই যেন এক দাবি- ‘গাজার গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াও’। তবে এদের মধ্যে বিশেষভাবে মানুষের নজর কেড়েছেন এক ঘোড়সওয়ার। এক যুবক ঘোড়ায় চড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে এসেছেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ঘোড়া ছোটাতে দেখা যায়। তার হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। তাকে ঘিরে অনেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করতে থাকেন।
এদিকে শুক্রবার ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন।