# বেড়েছে রোগীর সংখ্যা, পুরুষের
চেয়ে নারীরাই আক্রান্ত বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
জান্নাতুল ফেরদৌস। বিয়ে তিন বছর পার হলেও গর্ভে সন্তান না আসায় বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন বয়স ২৩ বছর বয়সী এ নারী। ছুটে যান চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে এ নারী থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগে ভুগছেন। অথচ জান্নাতের পরিবারের কারও এই রোগ নেই। যার কারণে তিনি নিজেও কখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার তো দূরের কথা ভাবেননি তিনি থাইরয়েডে আক্রান্ত।
শুধু জান্নাতের ক্ষেত্রেই একই নয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর চিত্রই একই। যারা জানেন না তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। একই সংখ্যা দেশের মোট থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রেও। দেশের প্রায় ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী থাকলেও তাদেরমধ্যে প্রায় তিন কোটি রোগীই জানেন না, তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত। এমন তথ্য ওঠে এসেছে- বাংলাদেশে হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রধানতম সংগঠন ‘বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি’ (বিইএস) এক গবেষণায়। এমতাবস্থায় রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জোর দেয়ার তাগিদ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অবহেলা বা রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে থাইরয়েড জনিত উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। সুখবর হচ্ছে- এখন আর এ রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। দেশেই আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই অবশ্যই এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ চিকিৎসকদের।
চমেক হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের বর্হিঃবিভাগে সপ্তাহে দুই দিন রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। ২০২২ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এ বিভাগে থাইরয়েড সমস্যা নিয়ে সেবা গ্রহণ করেন প্রায় আড়াই হাজার রোগী। যাদের মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই ছিলেন ‘হাইপারথাইরয়ডিজম’র রোগী (প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হরমোন তৈরি হওয়া)।
বিইএস তথ্য অনুসারে, দেশে প্রায় ৫ কোটির ও বেশি মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। যার প্রায় ৩ কোটিই জানে না তাদের এই রোগটি আছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই রোগের প্রকোপ বেশি। সাধারণত একজন পরুষের বিপরীতে দশজন নারী থাইরয়েড জনিত রোগে আক্রান্ত। প্রাপ্তবয়স্ক ২ শতাংশ মহিলা ও ০ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ হাইপারথাইরইডিজম (হরমোন আধিক্য) এবং ৩ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ ও ৯ দশমিক ৪ শতাংশ মহিলা হাইপোথাইরয়ডিজম (হরমোন স্বল্পতা) এ আক্রান্ত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে আয়োডিনের ঘাটতি এবং এন্টিবডি উপস্থিতির আধিক্যের কারনে এ অঞ্চলে থাইরয়েড রোগের প্রকোপ বেশী বলে ধারনা। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়। যা পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া রোগ শনাক্ত দেরি হওয়ার কারণে এ রোগের জটিলতা বাড়ছে। তবে সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা যায় এবং হরমোন ও থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়, তাহলে অবশ্যই এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।’
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘মহিলাদের ক্ষেত্রে একটি হতাশার কথা প্রায়ই শোনা যায়- হরমোন রোগ থাকলে গর্ভধারণ করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা, এতে ভয় পাওয়ায় বা হতাশ হবার কিছু নেই। সঠিক সময়ে ঔষধ সেবন করে গর্ভধারনের পূর্বে হরমোনের মাত্রা এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে রুটিন পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিয়ের আগে বা গর্ভধারনের পূর্বে নারীকে অবশ্যই থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে দেখা জরুরি।’