অপ্রশিক্ষিত কর্মচারীদারা দেয়া হয়
ইশারা ভাষায় ট্রেনিং।
প্রশিক্ষিত জনবল পেলে বাকশ্রবণ
প্রতিবন্ধীরাও ফিরে যাবে
সমাজের মূল স্রোতে।
মরিয়ম জাহান মুন্নী
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিএইচটি সেন্টারের বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ৮৮ শিক্ষার্থীর জন্য নেই একজনও শিক্ষক। এছাড়া কাগজে কলমে ইশারা ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নেই কোনো সেন্টার। দীর্ঘ দিন ধরে এমনই শিক্ষক ও প্রশিক্ষক সংকটে ভুগছে নগরীর মুরাদপুরে অবস্থিত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিএইচটি সেন্টারের বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানায়, বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে গত তিন বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদসহ আরো চার শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের ইশারা ভাষায় কথা বলা ও পড়ালেখার জন্য নেই কোনো ট্রেনিং প্রাপ্ত প্রশিক্ষক। তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই শিক্ষা কার্যক্রম।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর দু’টি শ্রেণীকক্ষে বসে আসে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একটি শ্রেণী কক্ষে একজন শিক্ষক পাঠদান করলেও শিক্ষক ছাড়া খালি পড়ে আছে পঞ্চম শ্রেণী। পাঠদানকারি শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায় একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে দুই শ্রেণীর পাঠ কার্যক্রম। এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাজ দিয়ে অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন তিনি। এভাবেই হেলেদূরে চলছে পাঠদান। এদিকে বলা চলে একবারে বন্ধ রয়েছে ইশারা ভাষায় কথা বলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। তবে মাঝেমধ্যে এসব শিক্ষার্থীদের ইশারা ভাষায় কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠানে অপ্রশিক্ষিত কর্মচারীদারা ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা যায়।
শিক্ষক মানছুরুল হক বলেন, আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক। তবে কর্তৃপক্ষের আদেশে বাকশ্রবণ শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস নিই। কারণ এখানে কোনো শিক্ষক নেই। আমি ছাড়াও একজন খ-কালীন শিক্ষক মাঝেমধ্যে এসে ক্লাস নিয়ে থাকেন। শুধু এখানেই নয়, একই অবস্থা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুলেও।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে জনবল কাঠামো মোতাবেক পিএইচটি সেন্টারের বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধীদের স্কুলে প্রথম শ্রেণীর একজন প্রধান শিক্ষক, দুই জন সহকারি শিক্ষক, ক্রাফট শিক্ষক চার জন ও ফিটার এটেনডেন্ট এক জনের পদ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখনো বেশিভাগ পদই শূন্য পড়ে রয়েছে। তবে পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠানো হলেও মিলেনি কোনো সমাধান।
প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে এখানে শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় বিভিন্ন মামলার প্রয়োজনে আদালন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইশারা ভাষায় কথা বলা ও বুঝার লোক চায়। কিন্তু এসব কাজেও সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানকে।
এ বিষয় পিএইচটি সেন্টার চট্টগ্রামের তত্ত্ববধায়ক (সহকারী পরিচালক) মোহাম্মদ কামরুল পাশা ভূ্ইঁয়া বলেন, নগরীর মুরাদপুরে ১৯৬৫ সালে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পিএইচটি সেন্টারের আওতায় বাকশ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য দুইটি স্কুল ও ট্রেনিং সেন্টা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকটে ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। বেশ কয়েকবার পদায়নের জন্য চিটিও দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। সেটি এখনো প্রসেসিংয়ে আছে। তবে আমরা শিক্ষা ও ট্রেনিং কার্যক্রম বন্ধ রাখিনি। ইশারা ভাষা এপসের মাধ্যমে অন্য কর্মকর্মা ও এক শিক্ষক এবং অভিভবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে সেটি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে অবশ্যই আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন। তাহলে এসব শিক্ষার্থীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরবে। এ শিক্ষার্থীরাও অন্য স্বাবাভিক মানুষের মত কর্মক্ষেত্রে সমান অবদান রাখতে পারবে। এ জন্য আমরা আরো বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার সহযোগিতা এসব শিশুদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। সেখানে তাদের সাংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সবার সাথে মেশার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।