সকাল থেকে গভীর রাত
চলছে রূপচর্চার কাজ
পার্লারগুলোতে
বসেছে সৌন্দর্য পিপাসুদের মেলা
মেয়েরা এখন পার্লারে নয়
নিজেরাই হাতে মেহেদি লাগান।
মরিয়ম জাহান মুন্নী
ঈদের কেনাকাটা শেষ হতেই নারীরা এখন ছুটছেন পার্লারের দিকে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে পার্লারগুলোতে বসেছে সৌন্দর্য পিপাসুদের মেলা। রোজার শেষ কয়টায় জমে উঠেছে নগরীর ছোট-বড় সব বিউটি পার্লার। ব্যস্ততা বেড়েছে বিউটি এক্সপার্টদেরও। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নারীদের রূপচর্চার কাজ। শুধু নারীরাই নয়, সৌন্দর্য চর্চায় পিছিয়ে নেই পুরুষরাও। ব্যস্ততা বেড়েছে ছেলেদের সেলুনগুলোতেও।
নগরীর বিভিন্ন পার্লারের কয়েকজন কর্মী ও মালিকদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা যায়, গত কয়েক বছর খুব একটা ভালো ছিলো না পার্লার ব্যবসা। তবে চলতি বছর ঈদের এ সময় বেশ জমে উঠেছে। এসব পার্লারে এবার ঈদে খুব একটা অফার নেই। কিন্তু অফার না থাকলেও প্রতিটি সার্ভিস মিলছে সুলভ মূল্যে। রবিবার নগরীর কয়েকটি বিউটি পার্লার ঘুরে এমন তথ্যই জানা যায়।
সরেজমিনে নগরীর জিইসি মোড়ের হাবিব তাসকিরা, হালিশহর কে ব্লকের আলোজ্জ্বা বিউটি কেয়ার, আফমি প্লাজায় পারসোনা ও আন্দরকিল্লা টার্চ লেডি বিউটি লাউঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন নিজেকে সুন্দর- পরিপাটি দেখাতে অল্প বয়সী তরুণী থেকে চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা করছেন ফেসিয়াল, ভ্রুপ্লাক, চুল কাটসহ সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক সব সাজসজ্জা। এসব নারীদের মধ্যে কিশোরী, তরুণী, চাকরিজীবী এবং গৃহিণীও রয়েছে। এছাড়া ঈদের দিন নিজেকে একটু বেশি সুন্দর দেখাতে নারীরা করছেন চুল রিবোন্ডিং। নারীদের বেশি আগ্রহ দেখা যায় ফেশিয়াল ও ভ্রু প্লাকে। পাশাপাশি করছেন হেয়ার কার্ট, মেনিকিউর-পেডিকিউরসহ চুল কালার। তবে এখনো শুরু হয়নি মেহেদি উৎসব।
এসব পার্লারে ফেসিয়াল শুরু হয়েছে ৬শ’ থেকে চার হাজার টাকায়। হেয়ার কাটের মধ্যে রয়েছে বলিয়ম লেয়ার, শর্ট বব্স, টুইগি ও ইমোকার্ট। এগুলো ৫শ’ থেকে ১২ হাজার টাকায়। মেনিকিউর-পেডিকিউর ৮শ’ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন রকমের রিবোন্ডিং রয়েছে। এসব রিবোন্ডিংগুলো শুরু হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকায়।
ছোটখাটো পার্লারগুলোতে বিভিন্ন ফেসিয়াল ৩শ টাকা থেকে ১২শ টাকা, হেয়ারকাট ১৫০-৩৫০ টাকা, রিবোন্ডিং তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
আলোজ্জ্বা বিউটি কেয়ারে চুলে মেডিসিন লাগিয়ে বসে আছেন এনি চৌধুরী। বাঁকা চুল তার একদমই পছন্দ নয়। তাই অনেক আগ থেকেই চুল রিবোন্ডিং (সোজা) করার সখ তাঁর। আলাপকারে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে চুল রিবোন্ডিং করবো করবো করে করা হয়ে উঠেনি। এবার ঈদে বাপের বাড়ি যাব। তাই ব্যবস্ততার মধ্যেও চলে এসেছি পার্লারে। আগে ফেসিয়াল করেছি। এখন চুল সোজা করছি। যাতে ঈদের দিন নতুন পোশাকের সাথে চেহারায়ও নতুনত্ব থাকে।
এদিকে, ঈদকে কেন্দ্র করে রূপচর্চায় শুধু নারীরাই নয়, এগিয়ে আছে পুরুষরাও। শেষ মুহুর্তে ভিড় দেখা যায় পুরুষদের সেলুনগুলোতে। চুল কাটা, দাঁড়িকাটার পাশাপাশি ফ্যাশন সচেতন পুরুষরা চুলকে লম্বা করে করছেন চুল রিবোন্ডিং, হাত পায়ের এক্সর্টা কেয়ার নিতে করছেন মেনিকিউর-পেডিকিউর। এছাড়া করছেন ফেসিয়ালও।
হাবিব তাসকিরা বিউটি সেলুনের মালিক সৈয়দ জালাল আহমেদ রুম্মান বলেন, নারীদের মত পুরুষরাও এখন পার্লারে ভিড় করছেন। চুল কাটা, দাঁড়িকাটার পাশাপাশি ফ্যাশন সচেতন পুরুষরা চুলকে লম্বা করে করছেন চুল রিবোন্ডিং। এছাড়া ফেসিয়াল করছেন।
আলোজ্জ্বা বিউটি কেয়ারের ম্যানেজের মনিরুল আলম চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ঈদে কাস্টমারের ভিড় বেড়েছে। আমাদের এখানে মেয়েদের পার্লার ও ছেলেদের সেলুন দুই পার্টই আছে। ঈদ উপলক্ষে লেডিস সেকশনে নতুন ফেসিয়াল রোজ ফেসিয়াল এসেছে। যা স্কিনকে ব্রাইট, গ্লো এবং সাইনি করবে। লেভিস পেডিকিউর- মেনিকিউর নামের নতুন একটি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে জেমস একশনে মিল্ক সুদিং নামের একটি নতুন ফেসিয়াল সার্ভিস এসেছে। এটিও স্কিনের সানবার্ন রিমুব করতে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। স্ক্রিনে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনবে।
ঈদে যত সাজই সাজা হোক না কেন, মেহেদিতে হাত না রাঙালে ঈদটাই যেন অপূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু পার্লারগুলো ক্লাইন্ডরা রূপচর্চার কাজে ব্যস্ত থাকলেও নেই মেহেদি লাগানোর তোড়জোড়।
আন্দরকিল্লা টার্চ লেডি বিউটি লাউঞ্জ মালিক খুকু মনি বলেন, পার্লারে রূপচর্চার সব রকম কাজ হলেও এখন মেহেদি আলপনার কাজ হাতে গোনা কয়েকজনে করে। এখন মেয়েরা নিজেরাই ভালো মেহেদি লাগাতে পারে। এছাড়া যেকয়েকজন নারীরা মেহেদি লাগায় তারা আসেন ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে। তাই এখন মেহেদির কোনো কাজ নেই।
পারসোনার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ফাতেমা মাহমুদ বলেন, সারাদিনই কাজ চলছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর বাড়ছে নারীদের ভিড়। পাশাপশি বাবা মায়ের সাথে শিশুরাও আসছে চুল কাটতে।